Wed 29 October 2025
Cluster Coding Blog

ভ্রমণ কাহিনী তে অমিতাভ দাস (পর্ব - ১)

maro news
ভ্রমণ কাহিনী তে অমিতাভ দাস (পর্ব - ১)

কাশী-বিশ্বনাথ

সকাল দশটার একটু আগে বারানসী জংশনে আমরা নামলাম। তার আগেই ট্রেন থেকে দেখে নিয়েছি কাশীর সৌন্দর্য । ছবির মতোই গঙ্গার তীরে সারি সারি সাজানো নৌকা আর পাশে অজস্র মন্দিরের চূড়া দেখা যাচ্ছিল। এক ঝলক এই দর্শন বড়ো ভালো লাগল। চোদ্দ ঘন্টার জার্নি কোথায় যেন অদৃশ্য হয়ে গেল। নতুন জায়গা, নতুন মানুষ, নতুন তীর্থ দেখার আনন্দ-ই তো আলাদা। তিনমাস আগে টিকিট কাটা হয়েছে। আমরা ছয়জন এসেছি কাশী-বিশ্বনাথ দর্শনে। বাবা-মা-মাসী-মেসো, মাসির পরিচিতা একজন ও আমি। রাত আটটার বিভূতি এক্সপ্রেস, হাওড়া থেকে ছাড়ে। হোটেল আগে থেকেই বুক করা ছিল। অসি ঘাটের কাছে, সোনাপুরার মোড়ে। বিজয়কৃষ্ণ মঠের পাশেই আমাদের থাকার আস্তানা। মেন রাস্তা থেকে বাদিকে গলির ভিতর। দুপুরে হোটেল থেকেই খাবার অর্ডার করলাম। থালিতে ছিল ভাত ডাল ফুলকপির তরকারি পনিরের তরকারি চাটনি পাঁপর আর টক দই। স্বাদ মন্দ নয়। খিদের সময় সব-ই অমৃত। খেয়ে ক্লান্ত আমরা ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুম ভাঙতে ভাঙতে বিকেল। ঝটপট তৈরী হয়ে হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছলাম অসিঘাট। বিকেলের আলো তখন নিভে গেছে। অক্টোবরের মাঝামাঝি। একটু দ্রুত-ই সন্ধ্যা নেমে আসে। ঘাটের সিঁড়িগুলি লোকে লোকারণ্য । আরেকটু পরেই আরতি শুরু হবে। মা-মাসিরা নদীতে প্রদীপ ভাসাল। আমি তাঁদের থেকে আলাদা হয়ে নিজের মতো ঘুরতে লাগলম-- চা খেলাম। ঘন দুধের চা, মাটির ভাঁড়ে, ওপরে তুলসীপাতা দেওয়া। অসামান্য সে চায়ের স্বাদ। দাম পনের টাকা। সন্ধে সাড়ে ছটায় শুরু হল আরতি। আমরা মুগ্ধ আনন্দ আর বিস্ময়ে সে আরতি দেখলাম। এখানে অনেকেই ছোটো ছোটো নৌকা ভাড়া নিয়ে নদীতে নৌকায় বসে আরতি দেখে এবং ঘুরে ঘুরে ঘাটগুলোও দর্শন করে। তবে আমরা যখন গেলাম, শুনলাম: নৌকা চলাচল বন্ধ। নদীতে জল বেড়েছে, তাই প্রশাসন নৌকা ভ্রমণ বন্ধ রেখেছে। অসিঘাটের অনেক গল্প আছে। বারানসীর শ্রেষ্ঠ ঘাটগুলির মধ্যে অন্যতম অসিঘাট। মহাকবি তুলসীদাস নিয়মিত অসিঘাটে স্নান করতে আসতেন এবং এই ঘাটেই তিনি দেহ রাখেন। এই ঘাটটি বারানসী শহরের দক্ষিণে অবস্থিত । পর্যটকদের কাছে এই ঘাটের আকর্ষণ অসীম। সমীক্ষা বলছে প্রতি ঘন্টায় প্রায় ৩০০ জনের মতো পর্যটক এই ঘাটে আসেন। অনেক সিনেমার শুটিং এই অসিঘাটেই হয়েছে। হিন্দি উপন্যাস কাশীনাথ সিং-এর " কাশী কা অসি" অসিঘাটের চারপাশের মহল্লা নিয়ে রচিত। বরণা আর অসি নদীর সঙ্গে গঙ্গার মিলনস্থল হল বারানসী। এখন যাকে অসিঘাট বলে, তার পূর্ব নাম অসিসঙ্গম। নালার মতো সরু এক নদী গঙ্গায় মিশে এই ঘাট। বাবা বললেন, শুনেছি অসি ঘাট থেকেই কাশী ভ্রমণ বা পরিক্রমা শুরু করতে হয়। অসি ঘাটের ওপরে আছে শ্রীশ্রীজগন্নাথদেবের মন্দির। আছে দুর্গা মন্দির। জগন্নাথ মন্দিরের কাছে সাংঘাতিক ভিড়। সব বসে আছে। আমরা দুর্গামন্দিরটি দর্শণ করে বাইরে আসতেই দেখলাম আরতি শুরু হয়ে গেল। সে এক হৈ হৈ কান্ড। হাজার হাজার মানুষ। আরতির সঙ্গে আর উচ্চ স্বরে গীত হচ্ছে শ্রীশিবতান্ডব স্ত্রোত্র। " জটাটবীগলজ্জলপ্রবাহপাবিতস্থলে গলে হবলম্ব্য লম্বিতাং ভুজঙ্গতুঙ্গমালিকাম্ ।..."

দেখলাম উপস্থিত দর্শকরা তাতে গলা মিলিয়েছেন। আমরাও গলা মেলালাম। আবেগ ও ভক্তিভাব মিশে এক তুরীয় আনন্দের অনুভব করলাম।

ক্রমশ...

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register