Thu 30 October 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ভ্রমণ কাহিনী তে অমিতাভ দাস (অন্তিম পর্ব)

maro news
সাপ্তাহিক ভ্রমণ কাহিনী তে অমিতাভ দাস (অন্তিম পর্ব)

কাশী-বিশ্বনাথ

সারনাথ পৌঁছাতে আধঘন্টা মতো সময় লাগল। কী শান্ত, সৌম্য পরিবেশ! গাড়ি থেকে নামতেই একজন গাইড এসে দাঁড়ালো। গাইড-এর কোন দরকার ছিলো না। তবু বাবা গাইড নিলেন। তিনি যে নতুন কিছু বললেন তা নয়। সবটাই প্রায় জানা কথা,তবু তীব্র গরমে মাথায় রোদ্দুর নিয়ে গাইডের কথা শুনতে হল। তিনি শুরু করলেন : সারনাথের পূর্ব নাম ছিল সারঙ্গনাথ। সেখান থেকেই লোকমুখে আজ সারনাথ হয়েছে ... চারপাশটা খুব সুন্দর করে সাজানো। অনেক মানুষ আজ এসেছেন সারনাথে বৌদ্ধমন্দির দর্শনে,তথাপি অপার্থিব এক শান্তি বজায় আছে। মন্দিরের ভেতরে গিয়ে ভগবান বুদ্ধকে দর্শন করলাম। চুপ করে দাঁড়িয়ে প্রণাম ও প্রার্থনা করলাম। তবে লোকজনের এতো ছবি তোলার বাতিক,আর সেলফির দৌরাত্ম্য যে কিছুক্ষণ দাঁড়ানো গেলো না। বাইরে এসে আমি আর মা চারপাশটা ভালো করে দেখলাম। মন্দির চাতালে ছায়া দেখে বসলাম। কাছে দেখি দীর্ঘ চৌবাচ্চার মতো করা, সেখানে পদ্মফুল ফুটে আছে। বুদ্ধ মন্দিরের বাদিকে দেখি চারতলা বাড়ির সমান বিরাট এক বুদ্ধমূর্তি। দেখে বামিয়ানের বুদ্ধ মূর্তির কথা মনে এলো। সেখানে তালিবানরা ঐতিহাসিক ঐতিহ্যমন্ডিত বুদ্ধমূর্তি ধ্বংস করার পর সারনাথে কয়েক বছর আগে শুনলাম এই দীর্ঘ মূর্তিটি তৈরি করা হয়েছে। একটু দূরে দেখি গাইড আর বাবার মধ্যে কথা হচ্ছে। ভাব দেখে বুঝলাম টাকা- পয়সা সংক্রান্ত। প্রথমে গাইড বলেছিল, যা খুশি তাই দেবেন। সে দশ মিনিটও সময় খরচ করেনি বা তেমন কিছু ঘুরিয়ে দেখায়নি। শুধুমাত্র দু-চারটে কথা বলেছে। তা সব ইতিহাস বইতে আছে। বাবা পঞ্চাশ টাকা দেওয়াতে নেবে না। দুশো টাকা দিলে নাকি ওর সন্মান রক্ষা হয়। শেষে ওকে একশো টাকা দিয়ে রক্ষা পাওয়া গেল। মেসো এইবার এসে বললেন, এইজন্যই আমি বারন করেছিলাম। তোমার বাবা কারুরই কথা শুনতে চায় না। আর গাইড নিলেও আগে থেকে কথা বলে নেওয়া উচিত ছিল। হিন্দিতে কী বললো, কিছুই তো বুঝলাম না। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, তোমরা বুঝলে ভালো। বললাম,বোধিঞ্জান লাভ করার পর বুদ্ধদেব সারনাথে চলে আসেন এবং তাঁর পাঁচজন শিষ্যকে বা পঞ্চভিক্ষুকে প্রথম উপদেশ দান করেন। অর্থাৎ বৌদ্ধ ধর্ম-এর প্রচার শুরু করেন।বৌদ্ধ ধর্মের ইতিহাসে এই ঘটনার গুরুত্ব অসীম। বৌদ্ধ ধর্মে এটি 'ধর্মচক্র প্রবর্তন ' নামে খ্যাত। মেসো হেসে বললেন,এসব তো ইতিহাসে পড়েছি। ----হ্যাঁ, পড়েছ। আজ সশরীরে সেখানে দাঁড়িয়ে আছ'। একটা শিহরন হচ্ছে না? বলতে বলতে আমরা বাইরে বেরিয়ে এলাম। দেখি ড্রাইভার সাহেব দাঁড়িয়ে। বললে, অনেকটা দেরি হয়ে গেছে। ইচ্ছে থাকলেও কাছে যে দুটি বৌদ্ধস্তুপ আছে, তা আর দেখা হল না। বিফল মনোরথে আমরা গাড়িতে উঠে বসলাম। বিকেলবেলা একা একা বেরিয়ে পড়লাম। বেনারসএর বিখ্যাত লস্যি ও চা খেলাম। গিয়ে বসলাম অসিঘটে। সন্ধ্যা পার করে হেঁটে হেঁটে আসলাম বিভিন্ন অলিগলির ভিতর দিয়ে। কী যে ভালো লাগছিল, বলে বোঝাতে পারবো না। অদ্ভুত এক নির্জনতা গ্রাস করেছিল তখন। ফেরার পথে কিনে নিলাম কিছু কিউ ফল। আমাদের এখানে অনেক দাম। ওখানে দারুণ ফলের বাজার। বেশ কমেই পেলাম। আবার আমাকে আসতে হবে। জানি না কবে আবার সময় হবে। বেনারস আমার কী যে ভালো লেগেছে কী করে বলি! তখনই প্রায় লিখে ফেললাম 'বেনারস' সিরিজের প্রথম কবিতাটি:

বেনারস-১

"সারি সারি নৌকো দাঁড়িয়ে রয়েছে ঘাটের মুখে। মানুষে মানুষে ছয়লাপ। প্রদীপ ভাসিয়ে দিচ্ছে কেউ কেউ সুখ-সমৃদ্ধির আশায়। বিলম্বিত ঘন্টাধ্বনি থেকে জেগে উঠছেন ভৈরব। জেগে উঠছে নদীর শান্ত জলরাশি। আরেকটু পর আরতি শুরু হবে। আমি এক কাপ চা খেয়ে নিই। তুলসী পাতা দেওয়া ঘন দুধের চা। মুগ্ধ বিস্ময়ে মানুষ দেখি। মানুষের নানা মুখচ্ছবি-- আশা ও আনন্দ দেখি। ভিখিরি দেখি। আরতির প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। ধুনো গন্ধ। হর হর মহাদেব ধ্বনিতে মুখরিত অসি ঘাট। আমার চোখে তো সব-ই অভূতপূর্ব। সরু গলিপথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে ভুলে যাই নিজ নাম। এই সময়। কে ছিলাম, কোথায় এসেছি...ব্যোম ব্যোম নাদ ওঠে। নদীর ঘাটে বাজে ডম্বরু। শুরু হয়েছে আরতি। আমি ভিতর ঘরে তাঁকে খুঁজি-- খুঁজতে খুঁজতে নির্জন একটা রাস্তায় চলে এলাম। এ পথেই হেঁটে গঙ্গাস্নানে যেতেন তুলসীদাস..."

সমাপ্ত

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register