Thu 30 October 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে প্রদীপ গুপ্ত (পর্ব - ৩০)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে প্রদীপ গুপ্ত (পর্ব - ৩০)

বাউল রাজা

তৃতীয় খণ্ড

--- পদীপদাদা -- আমি নিশ্চুপ হয়ে রইলাম। --- এবেরে বুজেচো ক্যানে আমি তোমারে বাউলমনা বলি? অনেক এমন ক্ষ্যাপা আচেন, যিনি সারাটা জেবন শুদুমাত্তর ডাকের সন্দানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আবার এমন অনেক ক্ষ্যাপা আচেন যারা মাতৃগভ্যে থাকতেই সে ডাক শুনতে পান। আহা -- রবিক্ষ্যাপা কী গানটাই না বেদেচেন গো গোঁসাই, আকাশের ব্যাকুল হবার খপর বাতাস বুকে করে নে বয়ে চলেচে। নইলে আকাশের ব্যাকুল হবার খপর যে তাঁর কাচে পৌঁচুবে না। তুমি থামলে কেনে গো পদীপদাদা? --- তুমি যখন কথা কও তখন যে আর কারও কথা কইবার অধিকার থাকে না গো কানাইদা। আমি একরত্তিও বাড়িয়ে বলছি না গো, তোমার কথা বলার মাধুর্য যেন ঠিক গানের সুরের মতো। --- পদীপদাদা, এ কতা যে আমার অহংকে উসকে দেয় গো। আমার বুকে যেটুকু তেলের যোগান ইশ্বর দিয়ে রেকেচেন, সে তেলের বুকে পলতে উসকে দিলে পর আলো কিচুটা তেজ বাড়াবে ঠিকই কিন্তু রসদেও তাড়াতাড়ি টান পড়বে যে। --- যার এই বোধ আছে তাকে উসকে দিতে হয় না, তার বোধই তাকে উজ্জ্বল করে তোলে। এতক্ষণে খেয়াল হলো, কৃষ্ণভামা গুনগুন করে গানের সুর তুলছে। আমি খেয়াল করতেই যেন লজ্জা পেলো খানিক। --- কিচু মনে কোরো না গো ঠাকুর, এ গানটা আমি এই পথমবার শুনলাম। এতোদিন যে কেন শুনিনি -- তোমার মতো এমন টানে কেউ তো টানেনা। গানটা তুইলে দেবে গো ঠাকুর? --- আমি শুদু তোরে লক্ষ্য করচি রে কিষ্ণামা, সেই যে লোকটারে ধইরে নে এলি, বলি পেটে কোনো দানাপানি পড়লো কিনা খোঁজ নিয়েচিস একবারের তরেও?

কৃষ্ণভামার মুখ লজ্জায় লাল হয়ে উঠলো। মাটির দিকে চোখ নীচু করে নখ দিয়ে মাটির বুকে দাগ কাটতে লাগলো। আমি বেশ বুঝতে পারছি যে ওর মন এক তীব্র অপরাধবোধে আচ্ছন্ন হয়ে গেলো। --- এই দ্যাখো, তোমাকে নিয়ে আর পারি না কানাইদা। বলি বাউলদিদির কি দোষ বলো দেখি? আমার খিদে পেলে আমি কি ওকে বলতাম না? এখনও যে এতোটুকুও খিদে পায়নি আমার। চলো গো বাউলদিদি, আজ আমি তোমাদের রেঁধে খাওয়াবো। খিচুড়ি আর ডিমভাজা। তুমি শুধু চাকাচাকা করে বেগুনটা ভেজে দিও। যাওয়ার পথে মুদি দোকানটা খোলা পাবো নিশ্চয়ই। --- সাধে তোমারে এত ভালোবাসি গো গোঁসাই? ওই মুখপুড়িই কি সাধে তোমাতে মজেচে? এ মন আর কোতায় গেলে পাবো? জয় মা তারা, আজ সকাল তেকেই মনটা খিচুড়ি ঈশ্বরমুখী হয়ে আচে গো। আর এই দেকো, না হলেও এটার ওজন আধাকিলো তো হবেই।

কানাইদা তার ঝোলা থেকে একটা গাঢ় বেগুনী রঙের বেগুন বের করে দেখালো। -- চোদ্দ পোয়া জমিখানি ভিতে জুড়ে রাখবো আমি ঢালবো গো সার গুরুর আশায় জমি যদি জোর ধরে। জমি রয় কেন পড়ে করলে আবাদ হয় যদি চাষ দেখ নারে মন চাষ করে...

দূর থেকে সুরটা ক্রমশ কাছে আসছে। কানাইদার দাঁতের সারি ঝকমক করে উঠলো।

ক্রমশ

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register