Sat 01 November 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে উজ্জ্বল কুমার মল্লিক (পর্ব - ২৬)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে উজ্জ্বল কুমার মল্লিক (পর্ব - ২৬)

সাদা মিহি বালি

৪র্থ অধ্যায় দ্বিতীয় পর্ব------ চড়ার দখল নিয়ে বামাদর্শের লোকের সঙ্গে রাঘবেন্দ্রবাবুর লোকেদের হাতাহাতি, লাঠালাঠি হয়েছে। সরকারের পরিবর্তন হলেও সরকারি- আধিকারিকরা, রাঘবেন্দ্রবাবুকে যথেষ্ট খাতির করে; তারা, রাঘবেন্দ্রবাবুর কাজকে সমর্থন করে, বামাদর্শের লোকদের পাত্তাই দেয় না; তবু, যদি উপর থেকে চাপ আসে, তবে? যাই হোক দখলকারীর দল, ভাই শিব- শংকরকে টার্গেট করেছে, বুঝতে পেরে রাঘবেন্দ্র- বাবু, ভাই শিব-শংকরকে, বেশ কয়েকদিনের জন্য অন্য জায়গায় সরিয়ে দিলেন। এবার, তাঁর মধ্যে বংশের সামন্ত- তান্ত্রিক মনোভাব উঠেছে জেগে; তাঁর পূর্ব- পুরুষরা লাঠিয়াল পাঠিয়ে কত জমি অন্যায়ভাবে দখল করেছে, কত বেয়াদপি প্রজাকে শায়েস্তা করেছে; উনি, প্রায়শ্চিত্তের পথে হাঁটছিলেন, কিন্তু ঐ অসভ্য, বর্বর, লুটেরারা!, নাঃ, দুনিয়া থেকেই ওদের সরাতে হবে। এবার তিনি ঐ লুঠ- সর্দারকে খতম করার জন্য। 'সুপারি' দিলেন, ওদেরই এক অতি- বাম দলের লোককে। প্রকাশ্যে দিবালোকে, আদর্শের গন্ধ ছড়িয়ে ঐ অতি বামের লোকেরা, লুঠ- সর্দারের বাড়ি ঘিরে, তাকে চরম শাস্তি দিল, যা শুনে বাঘবেন্দ্রবাবুও শিহরে উঠলেন;বাড়ি ঘিরে, ছাদের উপর তাকে, খুঁচিয়ে, খুঁচিয়ে মারা, ওঃ! মানুষ, আজ বর্বরতার শেষ সীমায়! অঞ্চলে ভয়ানক নীরবতা, শ্মশানের শান্তি বিরাজমান। তিনি মনে মনে দুঃখিত হলেন, লোকটির পরিবারের দুঃখে মর্মাহত; কিন্তু, অসভ্যকে সময়মত শিক্ষা না দিলে, সে যে অনেক মানুষের দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। রাঘবেন্দ্রবাবু অসহায় ভাবে ঈশ্বরের কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করলেন, এ ছাড়া তাঁর আর কোন উপায় ছিল না, কিন্তু এ যে ভয়ানক বর্বরতা! এ কেমন রাজনীতি! অর্থের লোভে নিজেদের মতাদর্শের লোককেও এরা পৃথিবী থেকে সরাতে পিছপা হয় না, এরা কী করে দেশের মানুষের উপকার করবে? আদর্শ তাহলে মুখোশ? এদিকে রঞ্জনদাও অফিসে আসতে পারছেন না, শয্যাশায়ী; চিঠি- চাপাটি জমে আছে, তিনিই সব সামলাতেন, এখন রাঘবেন্দ্রবাবুকেই সামলাতে হচ্ছে, নিজেরও শরীরটা ঠিক যাচ্ছে না। মনে হয়, এবার রঞ্জনদা ছেড়ে চলে যাবেন; উনি চলে গেলে, বাবা- কাকাদের সময়কার মানুষজনেদের সঙ্গের সম্পর্ক টুকুর হবে পরিসমাপ্তি । যাই হোক, আজ ওনাকে দেখতে যেতেই হবে মনে করে, অফিসের বড়বাবুকে কিছু ফল কিনে আনতে বললেন, আর অফিসের রিক্সাকে, দশটা নাগাদ তৈরি থাকতে বললেন; রঞ্জনদা'র বাড়ি যেতে হবে। পাণ্ডুয়া অঞ্চলের মোটা সোনার বরণ বালি- খাদানগুলোত গণ্ডগোল শুরু হয়েছে। এসময় রঞ্জনদা'র পরামর্শ খুব কাজে আসতো। সরকার, কৃষি- জমিতে বালি- খাদান নিষিদ্ধ করেছে, আইনও তৈরি হয়েছে। তিনিও কৃষি জমি চিরকালের মত নষ্ট করে বালি- খাদানের পক্ষে নয়, যদিও এই শিল্পে তাঁর টাকা খাটছে। ওনাদের বালি- খাদানগুলো বহু পুরোনো, এখন বালি না তুললেও বালির পাহাড় তো জমে আছে, সেখান থেকে সরকারের রয়াল্টি দিয়ে চলছে লরি, লরি বালি বিক্রি। আর এখানেই হয়েছে সমস্যা; বামাদর্শের লোক লরি পিছু তোলা না দিলে, লরি ছাড়তে দিচ্ছে না। এ শিল্পের যে কত ঝক্কি, যারা যুক্ত আছে, তারাই জানে। যাই হোক, বাবা, বাছা করে ঐ উঠতি ছেলেদের ক্লাব বাড়ি তৈরি করে দিয়ে মগরা- অঞ্চলের বালি বিক্রি শেষ হয়ে এসেছে। ওরাও রাস্তায় নেমে বালি বিক্রি চলবে না, স্লোগান তুলে জন- মানসে নিজেদের বৈপ্লবিক ভাবটা বজায় রাখছে, তা রাখুক, সবাই এখন করে কম্মে খাবার ধান্ধায় ব্যস্ত, পরিশ্রমের পথে যেতে ওদের অনীহা; লোককে বোকা বানিয়ে, টাকা রোজগার করতে পারলে, কে আর ঐ সব 'তত্ত্ব- টত্ত্ব' মানতে চায়, চালাও পানসি, জোয়ার যখন রয়েছে, লক্ষ্যই হোক স্থির, উপায় এখানে গৌণ,আর মানুষের স্মৃতিও বড় ক্ষণস্থায়ী। চলুক বোকা বানানো, উদ্ভব হোক নিত্য নতুন পদ্ধতি। কিন্তু, পাণ্ডুয়ার বালির পাহাড় থেকে বালি বিক্রির উপর হয়েছে কোর্টের ইনজাংঙ্কশন;বালির পাহাড়ের পাশে থাকা মাটির স্তূপ ধ্বসে একজন ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে, ঐ ইনজাংঙ্কশন উঠারও নাম- গন্ধ নেই। অনেক অংশীদারদের আর্থিক অবস্থা খারাপ; সর্বস্ব বিনিয়োগ করে দু'তিনজন অংশীদার এখন প্রায় পাগল হয়ে গেছেন। এ সব চিন্তা করে তিনিও একটু বিমর্ষ; ব্যবসায়ে লাভ- লোকসান তো থাকবেই, এ রিস্ক তো নিতেই হবে, তবে জুলুম বা হুমকি বরদাস্ত করা যায় না। শিল্পের সঙ্গে যে কয়েক হাজার অদক্ষ শ্রমিক জড়িত, সে কথা তো অ-বলাই রয়ে গেল। চলবে   
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register