Wed 29 October 2025
Cluster Coding Blog

অণুগল্পে সুলগ্না চৌধুরী

maro news
অণুগল্পে সুলগ্না চৌধুরী

হাস্নুহানা ও প্রজাপতি

হাস্নুহানার বাড়িতে রোজ প্রজাপতি আসে। খুব ভালো বন্ধু প্রজাপতি। তাদের অনেক মনের কথা দেওয়া নেওয়া হয়। হাসনুহানাকে প্রজাপতি খুব ভালোবাসে। হাসনুহানার সৌরভ যে প্রজাপতির খুব প্রিয়। আর হাসনুহানার পছন্দ প্রজাপতির রঙিন পাখা দুটো। কত রঙের আলপনা দেওয়া সে পাখায়। হাস্নুহানা সে রূপ দেখে আর মুগ্ধ হয়।

গ্রীষ্মের সূর্য উদয় হতেই হাসনুহানা অহনা আলোয় আড়মোড়া দিয়ে চোখ কচলে নিয়েই প্রথমে সূর্যের উজ্জ্বল রঙ পান করে নেয়। ঋতুতে, ঋতুতে অবশ্যই পরিবর্তিত হয় প্রভাতবেলা, খর তাপের দাপটের শেষে বৃষ্টির ধারায় সিক্ত করে নিজেকে আরো প্রেমময় সৌরভ ছড়িয়ে দেয়।শীতের শিশিরে মুক্তো গেঁথে পরে নেয় সে। আত্মানন্দে বিভোর। কিন্তু প্রতিনিয়ত অপেক্ষা তার প্রজাপতির জন্য।

নির্দিষ্ট সময় প্রজাপতি ঠিক আসে, হাস্নুহানা খুব খুশি হয়। দীর্ঘ রাতের অবসরের শেষে এসে প্রজাপতি হাস্নুহানাকে আলিঙ্গন করে। কি যে ভালো লাগে। সে সখ্যতায় তিরতির করে হৃদয় কাঁপে তার।

প্রজাপতির এই উষ্ণ ভালোবাসা সে নীরব হয়ে গ্রহণ করে। দিন যায়, দিন আসে রোজ প্রজাপতির সাথে কত্ত কথা হয়। অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ ঝোড়ো হাওয়া দিলে বুক কাঁপার গল্প, মৃদু হাওয়ায় বহে নিরন্তর আনন্দের গল্প। রাতের আঁধারে জোনাকির পিদিম জ্বেলে দেওয়ার গল্প। কখনও বন্ধুত্বে খুনসুটি, কখনও অভিমান, কখনও সোহাগ সব কিছুতেই বাঁধা সম্পর্ক।

কাল অতিবাহিত হতে থাকে। একদিন হাস্নুহানা খেয়াল করে তার পাপড়ির গায়ে আর সেই অসাধারণ সৌরভ নেই। বুঝতে পারে অনেক কাল পৃথিবীতে বাস করা হয়ে গেছে। প্রজাপতি আসে কিন্তু আগের মতন অনেক কথা সেও আর বলে না। হয়তো, হয়তো বহুদিন ধরে বয়ে, বয়ে ক্লান্ত শ্রান্ত পাখা দুটো মেলতে গিয়ে বাধে।

হাসনুহানা ভয় পায় হারাবার ভয়। ভেতর ভেতর গুমরে মরে, কিন্তু প্রজাপতি বন্ধুকে বুঝতে দেয় না।একদিন বিহানবেলায় হাস্নুহানার ঘুম ভাঙতে একটু দেরি হলো। একটু দেরী হওয়ায় সব এলোমেলো ঠেকলো। কিন্তু কি আশ্চর্য! বন্ধু প্রজাপতি কেন এখনো এলোনা! ভাবছে হাস্নুহানা। তার কানে বেজে চলেছে প্রজাপতির আদর করে ডাকা নাম "হাস্নু"! হুম, এই নামেই তো ডাকতে ডাকতে আসতো সে, সোহাগ করে মুখ ঘষে দিতো রেনু গুলোর মাঝে, পরাগ মাখতে মাখতে আহ্লাদী স্বর ঝরে পরতো। বারবার আজ মন কেমন করছে তার প্রজাপতি বন্ধুর জন্য।এখনও এলোনা, প্রতীক্ষা হলো অনন্ত, গোধূলি এল রক্তিম বর্ন হয়ে দিনমনি চলে গেলেন তার সারাদিনের কর্ম পাটে তুলে।প্রজাপতি আর এলো না। হাস্নুহানার চোখ ভরে গেলো জলে। অভিমানে ঠোঁট ফুলে উঠলো। সে মনে মনে বলে উঠলো "কাল আসুক আমার কাছে , খুব রাগ করে বলে দেবো তুই আমায় এইভাবে প্রতীক্ষা করালি কেন?" কিন্তু সেই প্রতীক্ষা অনন্ত হলো হাস্নুর। কোথায় যে গেলো বন্ধু প্রজাপতি। এক বুক ব্যথা জমে উঠলো হাস্নুর। সে ঘোলাটে চোখ আর মন নিয়ে তার পাশে বাস করা মাধবীলতার দিকে তাকিয়ে দেখলো কেমন ঝিরিঝিরি বাতাসে হিলহিলে তন্বী লতা হাসছে আর দুলে দুলে উঠছে, তাকে ঘিরে ধরেছে মৌমাছি আর প্রজাপতি সখারা।

হাস্নুহানা বুঝতে পারলো বুঝি বেলা ফুরিয়েছে তার। কিন্তু বেলা ফুরালেও এখনো রাখা হৃদয় জোড়া মান, অভিমান।অথচ এইভাবেই কালের গহ্বরে হারিয়ে যায় প্রয়োজন ভরা প্রিয়জনের ভালোবাসার গল্প। একদিন সব শেষ হয়। মহাকালের গহ্বরে। হাস্নুহানা আর প্রজাপতিরা আবার নতুন করে ফিরে আসে।

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register