Wed 29 October 2025
Cluster Coding Blog

কথোপকথনে ভার্গবী

maro news
কথোপকথনে ভার্গবী

কেন? কইফিয়ত এবং বসুধারা...

দৃশ্যকল্প এক : কি ব্যাপার ম্যাডাম আপনার জন্য কি অফিসের টাইম পিছিয়ে দেব নাকি এত দেরি কেন? বসুধা বলল, না স্যার জ্যাম অফিস টাইম... তাহলে আগে বেরোনোর চেষ্টা করুন নিশ্চয় চেষ্টা করবো স্যার। বসুধারা রোজ চেষ্টা টুকুই করে দৃশ্যকল্প দুই: বসুধা বললো, কাল থেকে আমি আধঘণ্টা আগে বেরোব। কেন? বুবুনকে স্কুল বাস কে ধরাবে? তুমি একটু পারবে না। অফিসে বড্ডো দেরি হয়ে যায়। আমি ? ওকে ছাড়তে যাব আবার আসবো আবার বেরোব হয় নাকি মানিয়ে গুছিয়ে নাও যে করে হোক। বসুধারা রোজ একটু করে মানিয়ে গুছিয়েই নেয়। দৃশ্যকল্প তিন: বুবুন চটপট কর মিনিট পনেরো আগে বেরোব। কেন মা? তোকে মিনি আন্টির কাছে দিয়ে বেরিয়ে যাব বাবা। টুসকির সাথে বাস ধরিস। আমি পনেরো মিনিট কি করবো? একটু বসবে দূর বাবা ভাল লাগেনা। বিরক্তিকর। বসুধারাএই বিরক্তি গুলোকে সহ্য করেই একগাল হেসে বলে জেমস নিয়ে আসবো বিকেলে। দৃশ্যকল্প চার: মিনি বুবুন কে এখন থেকে তোমাদের বারান্দায় বসিয়ে দিয়ে যাব একটু বাসে তুলে দিও টুসকির সাথে। সে না হয় দেব কিন্তু কেন গো? বড্ডো দেরি হয়ে যায় অফিসে একটু যদি সময় বাঁচে তাই.... আমার বাবা সংসার প্রায়োরিটি, তাই তো জব পেয়েও করতে পারলাম না। নইলে আমিও সেজেগুজে হওয়া লাগিয়ে তোমার মত দশটা পাঁচটা ডিউটি করতাম। অন্যদের না পারা গুলোকে প্রতিদিন হজম করেই বসুধারা পেরে যায় সংসার আর চাকরী সামলাতে। দৃশ্যকল্প পাঁচ: এ সপ্তাহে বুবুনের বাস কাকুকে ph করে দিও। ও ফিরবে না- আমি শনিবার হাফডে করে, স্কুল থেকে নিয়ে নেব। কেন? আবার কি হলো? বাড়ি যাব। বাবার শরীর ভালো না। রবিবার রাতে ফিরবো। এই উইকেন্ড গুলো সবই চলে যায়। কোথায় একটু ডিনার করতেও যেতে পারিনা। আফসোস হয় ধুস এই আফসোস গুলো হজম করতে বসুধারা শিখে যায় ঠিক। দৃশ্যকল্প ছয়: কি গো অফিস যাচ্ছ না বিয়েবাড়ি? এত সেজেছ কেন? অফিস থেকে বিয়েবাড়ি। অনিন্দ্যর বিয়ে বার বার যেতে বলেছে। এত ভাল ছেলেটা। সব্বাই যাবে জানো। সে তো সেই হাওড়া। ফেরা? সন্ধ্যা ম্যাডাম আর দিব্যেন্দু দা তো ফিরবেন উল্টোডাঙ্গা অবধি। তারপর তো আর দুটো স্টপেজ। চলে আসবো। যা পারো কর। বললে তো শুনবে না। বসুধারা মাঝে মাঝে না শুনেই ইচ্ছেগুলোকে বাঁচিয়ে নেয়। দৃশ্যকল্প সাত: এত দেরি কেন? কি ভাবে ফিরলে। আরে দিব্যেন্দু দা গাড়ি নিয়ে গিয়েছিলেন। বললেন না না এইটুকু আর একা গিয়ে কাজ নেই। বাড়িতেই ছেড়ে দিলেন। ভালোই আছো। বসুধারা হাসে। ভালো থাকে অন্তত চেষ্টা করে ভালো থাকার। দৃশ্যকল্প আট: দূর আমার ফাইলটা কই বসুধা, বসুধা। আসছি, ফোনে আছি। সারাক্ষণ ওই ফোনে ঢুকেই বসে থাকো। কেন? কি যে পাও? আনন্দ। আনন্দ পাই। তোমার ফাইল নিচের স্টাডিতে কাল ফেলে এসেছো। গায়ে মাখে না কথার বিষ। আনন্দ ঠিক খুঁজে নেয় বসুধারা। দৃশ্যকল্প নয়: অনেক রাত হলো শুচ্ছ না কেন? কথা বলছি। এত রাতে কার সাথে যে কথা বলো। মুচকি হাসে বসুধা। যে তির্যক মন্তব্য অনিমেষ করলো তাতে জলে তেল পড়ার মতো চরবর না করে মুচকি হাসি আর নীরবতা পছন্দ করলো বসুধা। সমস্ত কঠিনকে বসুধারা এরকম করেই হেসে সহজ করে দেয়। দৃশ্যকল্প দশ: তোমার পোস্টে অরূপ বাবু লাভ ইমজি দেয় কেন? হেসে ফেলে বসুধা। বলে অরূপ দা শুধু নয় সোমা, মৃদুলা, সেঁজুতি রাও তো লাভ ইমজি দিয়েছে। দেখনি বুঝি। ওটা ওদের ভাল লাগে তাই দিয়েছে। কেন দেয়? যে কারণে তোমার পোস্টে সুমনা, পিয়ালী, প্রদীপরা দেয়–ওই ইমজি ওদের ভাল লাগে তাই। এত ইনসিকিউর কেন তুমি। ভাল বাসলে ভরসা করতে শেখো নিজের মানুষটাকে। পারলাম না। এই অহেতুক না-পারা গুলোকে নিয়েই মন ভেঙেও বসুধারা হাসিমুখে বাঁচে। কালকের কি টিফিন দেবে বুবুন আর তার বাবাকে ভাবতে ভাবতে ভারী হয়ে আসে ক্লান্ত চোখের পাতা। দৃশ্যকল্প এগারো: সুমেধাদের বাড়ি নিমন্ত্রণ এ গিয়ে দেখে সে মেয়ে ঘেমেচুমে অস্থির। এত জন লোক। ওই টুকুনি স্পেস। বসে আছো কেন? গরম থেকে এলাম তো তাই। বেচারা বাচ্চা মেয়ে পারে নাকি সামলাতে? সামলে নেয় বসুধাদের মতো বুড়ো হাড়। হাড় ভাঙা খেটে উতরে দেয় সুমেধার বিবাহবার্ষিকীর পার্টি। দৃশ্যকল্প বারো: খুব খিদে পেয়েছে, জানো। কেন? এই তো দুটো রুটি গিললে শুতে আসার আগে। আমার তো দুটোতেই দিব্য পেট ভরে যায়। পেট ভরেনি গো। বেশী খায় এ লজ্জার চেয়ে অভাবের তাড়নায় যারা ভরপেট না খেয়েও দিন কাটিয়ে দেয় তাদের তবু শান্তি আছে– তারা খিদের কারণ জানে। সেই তাদের দুটি পেট ভরে খাওয়াবার অঙ্গীকার করে বসুধারা নিজের কাছে নিজে। আর নরম বিছানায় শরীর ডুবিয়ে শান্তির ঘুম খোঁজে।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register