Wed 29 October 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে উজ্জ্বল কুমার মল্লিক (পর্ব - ৩৩)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে উজ্জ্বল কুমার মল্লিক (পর্ব - ৩৩)

সাদা মিহি বালি

ষষ্ঠ অধ্যায় প্রথম পর্ব

অমর- মনোরমার বিয়ে, এ অঞ্চলে একটা ইতিহাস হয়ে আছে, আবার অমরের এ পৃথিবী থেকে চলে যাওয়াও একট গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়ে রইলো। ঘোষাল বাড়ির ছেলের অপমৃত্যু হল কি না, শেষে এক মক্ষীরাণীকে কেন্দ্র করে!; পূর্ব- পুরুষরা যদি থেকে থাকেন, তো লজ্জায় মুখ ঢেকে রেখে ভাবছেন যে তাদের প্রজন্ম হয়ে একটা মেয়েকে তাঁবে রাখতে পারলো না, এত অপদার্থ!, না, তাদের পাপের ফলে, প্রজন্মকে সে সবের খেসারত দিতে হচ্ছে, পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে হল, ভেবে শঙ্কাবোধ করছেন। জিনের মধ্যে দিয়েই তো বংশ- ধারা প্রবাহিত হয়, পাপ- পুণ্যের কর্ম ফলও তো তাহলে বহা স্বাভাবিক; বিশেষ করে, বামুনরা যখন বলে থাকে, বিশেষ পুণ্যের ফলে এ 'বাহ্মণ' কুলে জন্ম, তবে তো, এ অপমৃত্যুও ঐ বিশেষ পাপের ফলে সংঘটিত হয়েছে।

মনোরমার বিয়ে মাত্র বছর দু'য়েকের মত হয়েছে; এর মধ্যে মেয়েটার সিঁথির সিন্দূর মুছে গেল। ওর বাবা- মা, দিশেহারা। মেয়েটা, গ্রাজুয়েশন করার পর বিয়ের ব্যবস্থা করতে বলেছিল, এক রকম জোর করেই ওর বিয়ে দেওয়া হয়েছে;পড়াশোনায় খুবই ভালো, পড়তে চেয়েছিল;স্যান্যাল বাড়ির মেয়ে ,ধিঙ্গির মত ছেলেদের সঙ্গে কলেজে পড়বে, বাবা- মা, তা মানতে না পেরে এ বিয়ের ব্যবস্থা করেছিল। কিন্তু, হায়! এখন! বাবা- মা কপাল চাপড়াচ্ছেন, মেয়েকে নিজেদের কাছে নিয়ে যেতে এসেছেন। রাঘবেন্দ্রবাবুর নতুন বাড়ির দোতলায়, ড্রইংরুমে কথাবার্তা হচ্ছে।

রাঘবেন্দ্রবাবু, হঠাৎই উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলেন, "মনোরমা, এ বাড়িতে বৌমা হিসেবে এসেছে, বৌমা হিসেবেই থাকবে, কখনও বিধবা হিসেবে নয়, আমি তাকে অন্যত্র পাঠাতে অক্ষম; অবশ্য, এক্ষেত্রে মনোরমার মতামতই প্রাধান্য পাবে; আপনারা, মনোরমাকে জিজ্ঞাসা করুন", বলেই বজ্রকঠোর দৃষ্টিতে জানালা দিয়ে দূরে অঞ্চলের কালীমন্দিরের চূড়ার দিকে চেয়ে রহেছেন, ভাবছেন, মা, তাঁকে এ কী বিপদের মধ্যে দিয়ে নিয়ে চলেছেন---।

মনোরমার মা, মেয়ের ঘরে গেছেন। রমনী ও রাঘবেন্দ্রবাবু আজ পাষাণ- প্রতিম;বাবা- মাকে দেওয়া আশ্বাস রাখতে পারেননি; অমর তো শুধু ভাই নয়, সে যে তাদের কাছে সন্তান- সম; অপত্যের এ পরিণতি, পিতা মাতার কাছে যে বজ্রাঘাত, কীভাবে তাঁরা তা বোঝাবেন!

মনোরমা, নিজের মা'র সঙ্গে ড্রইংরুমে এসে বললো, "বাবা, আপনারা তো কন্যা বিদায় করেছেন; আমার তো কোনও মতামত গ্রাহ্য করেননি;এখন আমি, যদি পিতৃতূল্য দাদা, ও মাতৃতূল্য ভাবী-মাকে ছেড়ে আপনাদের কাছে যাই,তো আমার নরকেও স্থান হবে না; এরকম দুঃসময়ে, আমার পক্ষে এঁদের ছেড়ে কোথাও যাওয়া সম্ভব নয়, অন্ততপক্ষে, এ রকম অন্যায় করতে আমাকে কখনও বলবেন না। "

দূরে ভাগীরথীর জলের ঢেউ রোদের আলোয় চিকচিক করছে, নদীর পাড়ে এসে আছড়ে পড়ার ছলাৎ, ছলাৎ শব্দ, হয়তো নতুন দিনের আগমন বার্তার ইঙ্গিত দিতে চলেছে।

(চলবে)

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register