Wed 29 October 2025
Cluster Coding Blog

গল্পতে উত্তম বনিক

maro news
গল্পতে উত্তম বনিক

দুর্গা এলো ঘরে

কালের নিয়মে প্রতিবারই দুর্গাপুজো আসে আবার প্রতিবার তা চলেও যায়। আসার আনন্দ, যাওয়ার বেদনা প্রতিটা মানুষই তা উপলব্ধি করতে পারে। একবুক যন্ত্রণা নিয়ে আবার একবছরের প্রতীক্ষা। তার মাঝেই অনেকে পৃথিবীতে আসেন আবার অনেকেই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরলোকে পাড়ি দেন। বছর কুড়ি আগে ঠিক এমনই একদিন পলাশ পিতৃহারা হয়েছিল। পূজার ঠিক দুদিন আগেই যখন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে পলাশের বাবা পরলোকে পাড়ি দিয়েছিলেন, তখন পলাশের দুঃখের থেকে রাগ হয়েছিল বেশি! কারন এত সখ করে মনের মতো জামা, প্যান্ট, জুতা সব বাবার থেকে জেদ করে কিনেছিল, তা সব আজ মাটি। সাধারণত এ জগতে বাবার মৃত্যু শোক থেকে বড় কিছু হতে পারেনা একজন সন্তানের জন্য, কিন্তু এক্ষেত্রে পলাশ ছিল তার ব্যতিক্রম। বাবা তাকে যতোই ভালোবেসে কাছে টানার চেষ্টা করতেন, পলাশ ঠিক ততটাই দুরে সরে যেতো। সহ্য হতোনা তার এই "ন্যাকামি"। একজন রিক্সাওয়ালা যিনি সবসময় নোংরা কাপড়, গলায় গামছা, পায়ে তার দিয়ে বাঁধা ছেঁড়া জুতা পরে থাকে। রাতে সামনে গেলে গা থেকে চোলাই মদের বিশ্রী গন্ধ বের হয়! সে যাইহোক আমার বাবা হতে পারে না। এই ঘিঞ্জি বস্তিতে নোংরা পরিবেশে থাকতে থাকতে পলাশ আজ যেনো হাঁপিয়ে উঠেছে. পলাশের মতোন ছেলের ক্ষেত্রে হাঁপিয়ে ওঠাটা যেনো একটা স্বাভাবিক ব্যাপার। কারন পলাশ যে শহরের অভিজাত ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলের ছাত্র। তার ওঠা বসা সবসময় প্রতিষ্ঠিত বড় ব্যবসায়ী ও চাকুরীজীবি ঘরের ছাত্রদের সাথে। কোনোদিনও কাউকে এই নোংরা বস্তিতে আসার কথা বলতে পারেনা পলাশ। তাই যত রাগ ওর বাবার প্রতি। মাঝে মাঝেই তাই পলাশ বাবা মাকে অপমান করতো। যতোই বাবা গলার গামছা খুলে ও মা শাড়ির আঁচল লুকিয়ে চোখের জল মুছত, ততই অবহেলা করে পলাশ বলতো "ন্যাকামি হচ্ছে"! আজ পলাশ দাস শহরের এক নামী উকিল, স্ত্রী একজন নামী ডাক্তার। ঘর আলো করে আছে চার বছরের পুত্র ঋক। কি নেই আজ পলাশের কাছে? আজও ঠিক পূজার দুইদিন বাকি। চারিদিকে তার ব্যস্ততা। ঢাকের আওয়াজ, কাশ ফুলের লুটোপুটি, শিউলি ফুলের সুবাস। কিন্তু তবুও আজ পলাশের মনটা খুব খারাপ, কারন বউয়ের সাথে বড় শহরে শপিং করতে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাবার মৃত্যুর কুড়িতম বার্ষিকীতে পলাশ যেতে চায়নি বলে বউয়ের সাথে খুব ঝামেলা হচ্ছে কাল রাত থেকে। বুকটা হঠাৎ করে যেন একটা মোচড় দিয়ে উঠল পলাশের, কি হয়েছে আজ আমার? এত কষ্ট কোথা থেকে আসছে? গলা কেনো শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে? কেন আজ বাবা মায়ের কথা এত মনে হচ্ছে? না.. না.. না.. এ হতে পারে না! আমি যে তাঁদের উপর চরম নির্যাতন করেছি, তাঁরা আমায় যতোই আপন করতে চেয়েছিলেন আমিতো একরাশ ঘেন্না ছাড়া কখনো কিছুই দিতে পারিনি তাদের, তাহলে বাবা যে বলতো- এখন বুঝবি নারে পলাশ বাপ মা হলো একটা বট গাছের মতোন, যতোই বুড়ো হয়ে যাক সন্তানকে ছায়া ঠিক দিয়ে যাবে। পলাশ এখন বুঝতে পারছে সেই চরম সত্যটা। কিন্তু অনেক বেশি দেরি করে ফেলেছে সে। হঠাৎ ঋকের হাতের ছোঁয়ায় পলাশের সম্বিৎ ফেরে--- কি হয়েছে বাবা তোমার? কেনো তুমি এতো কাঁদছ? ও কিছু নয়রে বাবা, এটা আমার বহু পাপের ফল. যেটা আমি আজকে উপলব্ধি করতে পারলাম। পলাশ আজ বুঝতে পারছে- বাবা ময়লা ছেঁড়া জামাটা পড়তো বলেই পলাশ আজ কোর্টপ্যান্ট পড়তে পারে! তার দিয়ে বাঁধা ছেঁড়া স্যান্ডেলটা পড়তো বলেই আজ পলাশ দামী শু পড়তে পারে! গামছা দিয়ে বাবা মাথা থেকে পায়ের ঘাম মুছত বলেই পলাশ আজ বাতানুকুল ঘরে থাকতে পারে! দামী স্কুলে পড়ত বলেই আজ পলাশ দামী গাড়িতে চড়তে পারে! ওহ! আর পারছি না। অনেক জীবনের পাপ আমি যে সব এক জীবনেই করে ফেলেছি। দুদিন আগেই বৃদ্ধাশ্রম থেকে মায়ের একটা চিঠি এসেছিল। একটাই কথা লেখা ছিল তাতে "পলাশ এবার কি একটু বাড়ি নিয়ে যাবি বাবা আমায়"। আর নয় অন্যায়, অনেক হয়েছে। এক ছুটে ছেলেকে গাড়িতে বসিয়ে পলাশ রওনা দিলো বৃদ্ধাশ্রমের উদ্দেশ্যে। আরো একটা পলাশ যেনো না তৈরি হয় এই পৃথিবীতে। বোধনের আগেই তো রক্ত মাংসের নিজের মাকে তার উপযুক্ত আসনে প্রতিষ্ঠিত করতেই হবে।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register