Wed 29 October 2025
Cluster Coding Blog

অনুগল্পে সুনৃতা রায় চৌধুরী

maro news
অনুগল্পে সুনৃতা রায় চৌধুরী

মিনো'স

ও কল্পনার মা….! চটপট কয়লাগুলো ভেঙে দাও।" "কল্পনার মা! ঝটপট করো দেখি! ঐ কটা বাসন মাজতে এতক্ষণ লাগে? তোমার হাত যেন চলে না বাপু!" "নাও নাও! বাচ্চাকাচ্চার ঘর! এত দেরি করে এলে চলে?" কল্পনার মা যন্ত্রের মত সব কাজ সারে। ও যে একটা আলাদা মানুষ, ওর যে একটা নাম আছে, ভুলতেই বসেছে সে। দুই শিশুকন্যা কল্পনা আর অর্চনাকে নিয়ে যখন ওরা বর্ডার পেরিয়ে আসছিল, সেই সময় কারা যেন পিছন থেকে গুলি করে হারাধনকে মেরে ফেলে। মিনতি পিছন ফিরে তাকানোর সময় পায়নি। পাড়ার বলরাম জ্যাঠার পরিবারের সঙ্গে স্রোতের মত ভেসে এই কলোনীতে। জীবিকার সন্ধানে বড় অট্টালিকায় দাসীবৃত্তি। কাজের মাঝে যেটুকু অবসর মেলে, বারো ঘরের একফালি উঠোনে কাঁথা পেতে বসে। অপূর্ব দক্ষতায় ফুটিয়ে তোলে গোলাপ লতা, পদ্ম ফুল, নানারকম ফোঁড়ের সুচারু নকশা। আশেপাশের বাড়ি থেকে পুরোনো কাপড় চেয়ে এনে পাড়ের সুতোয় স্বর্গীয় সৌন্দর্য ফুটে ওঠে। বিনিময়ে মজুরি পায় সামান্য। ব্যানার্জী বাড়িতে এমনই এক শিল্প দিতে গিয়েছিল সেদিন বিকেলে। ব্যানার্জী গিন্নি কিছুতেই দেড় টাকার বেশি মজুরি দেবেন না, এদিকে তার আড়াইটা টাকার খুব প্রয়োজন। অর্চনার জ্বর, ওষুধ কিনতে হবে। বারবার বলাতে এক সুন্দরী মহিলা এসে ওর হাতে একটা টাকা দিয়ে বললেন ওনাকে আরেকটা এমন বানিয়ে দিতে। তিনি একটি স্কুলের শিক্ষিকা। সেই স্কুলেরই সেলাইয়ের দিদিমণি রমা দেবীর কাছে গল্প করতে তিনিও একদিন দেখতে চাইলেন। দেখে মোহিত হয়ে মিনতিকে শেখালেন কি করে ফ্রেমে আটকে পাতলা কাপড়ে এরকম নকশা ফুটিয়ে তোলা যায়। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা উদ্বাস্তু উন্নয়নের কাজে যুক্ত। কাজ দেখে মিনতিকে তাঁরা জোগান দিতে লাগলেন র সিল্কের থান, রং বেরঙের সুতো ইত্যাদি সেলাইয়ের উপকরণ। প্রথমে স্টোল, পাঞ্জাবির গায়ে ফুটিয়ে তোলা কাজ, ধীরে ধীরে শাড়ির কাজ। মজুরি মিলত ভালোই। বস্তি থেকে উঠে গেল মিনতি এক ভাড়াবাড়িতে। দুই মেয়ের লেখাপড়া চললো পুরোদমে। মেয়ে দুটি মেধাবী। প্রথম দিকেই থাকে ওদের নাম। ভয়ও ছিল না যে তা নয়। দুটি কন্যা নিয়ে একা একা মহিলা, তাও বেশি বয়সও হয়নি! প্রলোভন, রক্তচক্ষু প্রদর্শন, কিছুতেই কিছু হয়নি, বাড়িওয়ালা দত্ত বাবু এবং দত্ত গিন্নি সন্তানস্নেহে আগলে রেখেছেন। পায়ের তলায় মাটি ফিরে পেয়েছেন মিনতি দেবী। কিছু জমানো পুঁজি আর ব্যাঙ্কের অর্থানুকূল্যে একটা দোকান ঘর ভাড়া নিয়ে সেখানেই চলছে তাঁর নিজস্ব ব্যবসা। সাইনবোর্ডে জ্বলজ্বল করছে "মিনো'স"। দুটি কর্মচারীও রেখেছেন। হিসাবের দিকটা মেয়েরা দেখে। কল্পনার বিয়ে দিয়েছেন সুপাত্রে। অর্চনার ইচ্ছা আরো লেখাপড়া চালিয়ে যায়। বাণিজ্যে শুধু লক্ষ্মীই নন, সরস্বতীও বাস করছেন এসে।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register