Wed 29 October 2025
Cluster Coding Blog

গল্পে মালা চ্যাটার্জ্জি

maro news
গল্পে মালা চ্যাটার্জ্জি

লক্ষ্মীপুজো

ঠিক হলুদ বিকেলের মুখে মিসেস মুখোপাধ্যায় আসেন উল্টোদিকের টালির ছাউনির বাড়িটার বাঁশের বেড়া দেওয়া দরজাটার কাছে। এসে একটু ইতস্ততঃ ভাবে বলেন “দরজাটা খুলবেন।” মাধবীর মা‘র চোখ তখন বারান্দায় রাখা লক্ষ্মীপুজোর বাসনপত্রের দিকে ছিল। তার বাড়ির বাঁশের বেড়া দেওয়া দরজাটার কাছে দাঁড়িয়ে কেউ কথাটা বলছে তা মাধবীর মা বুঝতেই পারেনি। "এই যে শুনছেন, দরজাটা খুলবেন।" মাধবীর মা বাসনপত্রের দিকে তাকাতে তাকাতেবলল, “দরজা খোলা আছে, একটু ঠেলে ভেতরে আসবেন। বেড়াল, কুকুর ঢুকে গেলে মুশকিল হবে।" মাধবীর মা তাকিয়ে দেখল উল্টোদিকের মস্ত সাদা বাড়িটার ভদ্রমহিলা, যিনি চোখে পড়ার মতো। তাঁর সাজগোজ এ জায়গায় অনুপযুক্ত। শুধু তাই নয় চলাফেরার মধ্যেও একটা আভিজাত্যভাব আছে। কেন এসেছেন কে জানে! মাধবীর মা ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে। মনে মনে ভাবে একটু পরেই সন্ধ্যে হবে, এখন আবার কি উটকো ঝামেলা রে।! আজ বৃহস্পতিবার। লক্ষ্মীর পাঁচালী পড়তে হবে, প্রদীপ আর ধূপকাঠি জ্বেলে শাঁখে ফুঁ দিতে হবে এই সময় ম্লেচ্ছ বাড়ির বৌ এলেন। নেহাত উল্টোদিকের বাড়ি, তা না হলে ঢুকতেই দিতেন না।

মিসেস মুখোপাধ্যায়, যাঁর নাম সঞ্চারী তিনি খুব ঠান্ডামাথার ভদ্রমহিলা। কোনো অবস্থাতেই ভদ্রতার সীমা অতিক্রম করেন না। মাধবীর মা‘র তার প্রতি অভব্যতার নিদর্শন বেশ ভালোভাবে অনুভব করলেও বারান্দায় রাখা মোড়াটা টেনে বসেন। তারপর, হাসিমুখে বলেন, “দিদি আপনার বড় মেয়ে মাধবীর গানের গলা খুব সুন্দর। আমার ছেলে অনির্বাণ তো ওর গান শুনে মুগ্ধ। তাই আজ লক্ষ্মীবারের দিন এলাম বিয়ের প্রস্তাব দিতে। আশাকরি আমাকে ফিরিয়ে দেবেন না।" এরকমভাবে বিয়ের প্রস্তাব দিতে আসাতে মাধবীর মা ভ্রু কুঁচকে বললো, “অ্যাঁ, কী বলছেন আপনি? আপনার ছেলের সাথে আমার মেয়ের বিয়ে! দাঁড়ান, দাঁড়ান মামাকে জিজ্ঞাসা করে আসি। মামা কাল শরীর খারাপ বলে আমার বাড়িতে এসেছেন, এখন থেকে এখানেই থাকবেন।"

তার মুখের কথা শেষ হতেই সেখানে এসে দাঁড়ায় মাধবী। লাবণ্যময়ী এবং চোখে পড়ার মতো মেয়ে। উগ্র সৌন্দর্য নেই তার মধ্যে কিন্তু স্নিগ্ধ, শান্তরূপ আছে। ধীর স্থিরভাবে এসে দাঁড়িয়ে বলে, “মা চা করে নিয়ে আসবো?” মেয়ের দিকে রাগত দৃষ্টি হেনে মাধবীর মা বলে, “তুই দূর হ হতভাগী এখান থেকে। সন্ধ্যাবাতি জ্বালা হলো না, শাঁখে ফুঁ পড়লো না এখন চা! যতসব ম্লেচ্ছপনা।"

তারপর, “মামা, ও মামা, ডাকতে ডাকতে সামনের ঘরে ঢোকে যেখানে মোটাসোটা চেহারার শ্যামকান্ত ব্যানার্জ্জি তক্তপোষের ওপর বসে বড় একটা কাঁসার থালায় মন দিয়ে ফলমূল আহার করছিলেন। ভাগ্নীকে ঘরে ঢুকতে দেখেই তিনি একমুখ হেসে বলেন, "রাতের খাবারে দু‘টো রুটি আর পনীরের সব্জিটা দিস মা, সাথে ছানাও কিছুটা দিস।" —“সে সব ব্যবস্থা করা হবে মামা লক্ষ্মীর পাঁচালিটা পড়ে নি।” তারপর, ফিসফিস করে বলে, “উল্টোদিকের সাদা বাড়িটার গিন্নি এসেছে মাধবীকে ছেলের বৌ করার প্রস্তাব নিয়ে। ঐ যে গো যে নীল হাউসকোট পরে বারান্দায় দাঁড়িয়ে।" —অ্যাঁ, কি বলিস তুই! যার ছেলে কেতাদুরস্তভাবে রোজ গাড়ি করে অফিসে যায় সেই বাড়ি! খবরদার না, ওরা ঠাস ঠাস করে দরজা বন্ধ করে আর ফটফট করে ডিম ভেঙে খায়। একেবারে ম্লেচ্ছ।" —“তাহলে ওনাকে না বলে দি কী বলো?” —“সে আর বলতে।" বলে মামা পরিতৃপ্তির ঢেকুর তোলেন। মাধবীর মা ঘর ছেড়ে বারান্দায় আসতেই মিসেস মুখোপাধ্যায় বারান্দার মোড়া ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলেন, “আসি, আপনার লক্ষ্মীপুজোর দেরী হয়ে যাচ্ছে।" সম্মতিসূচক ঘাড় নেড়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে রইলো মাধবীর মা। তারপর গেটের মুখটা থেকে ঘর পর্যন্ত গঙ্গাজল ছিটোতে থাকে। ঘরে ঘরে তখন সন্ধ্যাপ্রদীপ জ্বলছে, শাঁখ বাজছে, লক্ষ্মীর পাঁচালি পড়া হচ্ছে। ঘরে অতিথিরূপে আসা লক্ষ্মীকে বিসর্জন দিয়ে পাথরের মূর্তি লক্ষ্মীপুজোয় ব্যস্ত হলো।

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register