Tue 28 October 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে প্রদীপ গুপ্ত (পর্ব - ৩৫)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে প্রদীপ গুপ্ত (পর্ব - ৩৫)

বাউল রাজা

তৃতীয় খণ্ড

আগুনের শিখাও বুঝি কখনও কখনও স্থির হয়ে পিঁড়ে পেতে চুপটি করে বসে। আত্মমগ্ন বাউল দুজনা তখন খমকে আর ডুগডুগির যে যুগলবন্দী বাজিয়ে চলেছেন সে মগ্নতাকে ভগ্ন করতে মন চাইছিলো না, কিন্তু মনও যে সবসময় নিজের বশে থাকে না সেটা অচিরেই বুঝলাম। ধরতাই এর ফাঁক পেতেই গলা যেন সে যুগলবন্দীর সাথে মিতালির সুরে মেতে উঠলো -- " তুমি আমার নয়নে নয়ন রেখো অন্তরমাঝে আজি প্রণমি তোমারে চলিব নাথ সংসার কাজে হৃদয়দেবতা রয়েছে প্রাণে, মন যেন তাহা নিয়ত জানে, পাপের চিন্তা মরে যেন দহি দুঃসহ লাজে। আকাশের গাঢ় নীল রঙ যেন মনের ভেতর বসত গড়েছে। আগুনে দেওয়া ডালপালার চিড়বিড়ানোর শব্দও যেন নিঃসীমে উধাও। ছুটকির হাতে আগুনে পালা যোগানোর দায়িত্ব সঁপে বাউলনি কখন যে নিঃশব্দে আমার পিঠের পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে জানিনা। এই চার লাইন যেন কতক্ষণ ধরে গেয়ে চলেছি -- অন্তরের অন্তরে যেন এক ঈশ্বরীয় উপলব্ধি। এরকম উপলব্ধি আমি আমার জীবনে কখনও পাই নি। " সদা কলরবে সারা দিনমান, শুনি অনাদি সঙ্গীত গান সবার সঙ্গে যেন অবিরত তোমার সঙ্গ রাজে। কৃষ্ণভামা আমার সাথে গলা মিলিয়েছে। নিবেদনের আবেগে যেন দুটো হৃদয় একীভূত হয়ে লুটিয়ে পড়ছে সুরস্রষ্টার আসনে। মনে হলো, ধীরেধীরে বাউলদিদি আমার পিঠের দিক থেকে আমার পাশে এসে বসলো। তার দুইবাহু শূন্যকে বেষ্টন করে যেন অমৃতসঙ্গ লাভ করতে চাইছে। আমার কী যে হলো আমার গলা আর আমার বশে নেই, আমার চেতনাও বুঝি পরমে লীন হয়েছে। কখন যে গানের পদ পরিবর্তিত হয়েছে আমি জানি না, আমার অচেতন মনের কন্ঠ হতে তখন নিঃসৃত হচ্ছে অন্য একটি গানের বাণী। " আহা তোমার সঙ্গে প্রাণের খেলা প্রিয় আমার ওগো প্রিয় বড়ো উতলা আজ পরাণ আমার খেলাতে হার মানবে কী ও... সেই রাতের বেলা মাথার ওপরের ছাতিমের ডালে ডালে যেন হাওয়ার নাচনে নূপুরধ্বনি বাজতে লাগলো। নদীর বুক থেকে এক টুকরো হাওয়ার চূর্ণী এসে যেন নৃত্যের বিভঙ্গে উঠোনে লুটিয়ে পড়ছে। --" কেবল তুমিই কি গো এমনিভাবে রাঙ্গিয়ে মোরে পালিয়ে যাবে তুমি সাধ করে নাথ ধরা দিয়ে আমারও রঙ বক্ষে নিও এই হৃৎকমলের রাঙা রেণু রাঙাবে ওই উত্তরীয়! আহা তোমার সঙ্গে প্রাণের খেলা... ভোর হয়ে এলো কি? পুবের আকাশ যেন অরুণরাগরঞ্জিত হয়ে উঠেছে! বাতাসের বুকে শিহরণ লাগলো যেন, পক্ষিসকল কি প্রভাতী সঙ্গীত শুরু করলো! যেন অতিদূর থেকে বিশু বাউলের কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম। বিভাসে আর পিলুরাগে কোন খেলাচ্ছলে একাকার করলে গো ঠাকুর! একতাল কীভাবে যে দাদরা হয়ে বাজতে শুরু করলো সে খপর কি ওই ডুগী তবলাই জানে নাকি আমার হাতের আঙুলেরা জানে! একটা কতা বলি গো পদীপদাদা, সুর যেভাবে তোমার চরণ ছুঁলো, যেভাবে এসে মাতা ছোওয়ালো সে দৃশ্য তুমি না দেখলেও আমরা সবাই পত্যক্ষ করলাম গো। আমার গান নিয়ে আমার গর্ব চিলো সে গর্বরে তুমি একটান মেরে খানখান করে দিলে গো ঠাকুর। ক্রমশ
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register