Tue 28 October 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে প্রদীপ গুপ্ত (পর্ব - ৩৭)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে প্রদীপ গুপ্ত (পর্ব - ৩৭)

বাউল রাজা তৃতীয় খণ্ড

বাউলনি আমার প্রসারিত দুবাহুর মধ্যে নিজেকে সঁপে দিলো। ওর দুগাল দিয়ে আমার দুগালে আদর করতে করতে বলে উঠলো -- ঠাকুর আমার মন এমন উতলা হয়ে উটচে কেনে গো? মন যেন বলচে এ দেকাই আমাদের শেষ দেকা। নইলে তিনি তোমার মুক দে এ কলি কেন বলালেন গো ঠাকুর? তুমি লিচ্চয় জানো যে এ গান তুমি গাওনি, তুমি শুদু ঠোঁট নাইরেচো, আর অন্তরের বেতর তেকে তিনি তোমাকে দিয়ে গাইয়ে নেচেন। কেউ জানুক না জানুক তিনি জানেন যে গোঁসাই ঠাকুর আমার সব্বস্ব। কিন্তু তুমি আমার পরাণের পদ্মবনে মিলনের বীণার সুর গো ঠাকুর। তাই বুজি এই বিদায় বেলায় সুরসুদায় তিনিই আমার হিদয়কে ভইরে দিলেন গো -- যে পথে যেতে হবে সে পথে --- বাউলনি আর এগোতে পারলো না, ঝরঝর করে কেঁদে ফেললো। ওর শরীরটা কেটে ফেলা কোনো গুল্মলতার মতোই এলিয়ে পড়লো মাদুরের ওপর। -- তোর এ পেম তো সমাজ মানে না লো, অন্তরের আলো অন্তরে চেইপে রাকতি হপে। সে আলোর পকাশ যে নিষিদ্দ রে ক্ষেপী। চাকের মদুরে চাকের বেতরেই জইমে রাক। কেনে মইরতে বাউল ঘরে জন্ম নিলি রে পোড়ারমুকি? --- তোমার এ ভান্ত দারণা গো বিশুদাদা। কিষ্ণামা তো জনম বাউল লয়, ওর জাত কি, ধম্ম কি, গোত্তর কি সেসব কি আর ও নিজেও জানে? পতের মদ্দের থে কুইরে পেচিলাম গো এই ফুলের চারা। তকন কিষ্ণামা মাটির সাতে কতা কয়। আমিই কি জানি ছাই, ও বামুন না কায়েৎ, নমশূদ্দর নাকি মোচলমান, শুদু জানি আমার কিষ্ণামা একজন সত্যিকারের মানুষ, যার অন্তরে পেম আর মুকে আলোর বাসা। শুদু একটা কতাই বুজে পেলুম না এদ্দিনে, এতো তো মনিষ্যি আসে এ ঠাঁয়ে, তালেপরে পদীপদাদারে ও ওর মন -- --- তুমি শুদু একটা দিকই দেইকলে গো কানাই বাউল। পদীপদাদার কতা ভাবো দিনি। কেউ কি আর বাউল হয়ে জন্মায় গো, তুমিই কি জন্ম বাউল বলো দিনি? বাউলের ঘরে জন্ম নিলি পরেই যদি বাউল হওয়া যেতো তালেপরে আর সাদনপতে যাওয়ার কি পয়োজন চিলো বলো দিকিনি? কেউ এ জন্মে সাদন করে, কেউ সাদন করে জন্ম নেয়। পদীপদাদা হলো গে জন্মজন্মান্তরের বাউল গো। ওর মনে যদি বাউলের বাস না থাইকতো তালে এরম ভাব, এরম সমপ্পন শিকলো কোত্তেকে শুনি? তখনও ঊষাকালের রঙ ধরেনি আকাশের গায়ে। মাথার ওপর গাছের ডালে পাখপাখালির ডাকাডাকি শুরু হয়নি। ডালেডালে যেন আড়মোড়া ভাঙার শব্দ। কারো মুখে টুশব্দটি নেই। যেন অনন্ত শব্দহীনতার ধ্যানরত হয়েছে সময়। দূর থেকে কেউ যেন সুর ধরেছে। কলি শোনা যাচ্ছে না। শুধু অস্পষ্ট সুরের মূর্ছনায় দোতারার আওয়াজ। ধীরেধীরে অস্পষ্ট বানী স্পষ্টতা পাচ্ছে -- --" একই দেশের মানুষ যদি হয় তাহার সাথে কোরো প্রণয় বিদেশী আর জংলী টিয়ে কখনও যে পোষ মানে না। ভাব দিলে বিদেশীর ভাবে ভাবে ভাব কভূ না মিশে পথের মাথায় গোল বাঁধাবে কারো সাথে কেউ যাবে না.... ক্রমশ
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register