Tue 28 October 2025
Cluster Coding Blog

অণুগল্পে সর্বাণী পাল

maro news
অণুগল্পে সর্বাণী পাল

আগমন

এখন বাজে প্রায় বেলা ১২ টা, নীল আকাশ পেঁজা তুলোর মতো সাদা মেঘের বদলে কালো মেঘে ছেয়ে গেছে, যদিও বৃষ্টি হ‌ওয়ার সম্ভাবনা নেই, হাওয়ায় কেটে যাচ্ছে মেঘ। তবু ভ্যাপসা একটা গরম পড়েছে সকাল থেকেই! শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সবাই, কাপড়ের দোকানগুলোতে তিল ধারণের জায়গা নেই। কালো মেঘের চোখরাঙানি আর ভ্যাপসা গরম উপেক্ষা করেই অলিগলিতে চোখে পড়ছে কচিকাঁচাদের দল। এই ব্যস্ত রাস্তা দিয়েই একটা চেরি লাল রং এর শাড়ি পড়ে হনহনিয়ে হেঁটে চলেছে চিত্রা। এখনো অনেক কাজ বাকি, বাজার করা, ফল-মিষ্টি কেনা, পুরোহিত ডাকা, এত আয়োজন একা হাতে সামলাতে পারবে কিনা এই টেনশনেই সে ঘুমাতে পারেনি কাল সারারাত! অবশ্য রেণু এখন বড়ো অনেকটা, ধীরে ধীরে বুঝতে শিখছে সব। তবু অভিভাবক বলতে আর তো কেউ নেই তেমন, তাই দায়িত্বসহ কাজটা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন না করা পর্যন্ত চিন্তা তো থেকেই যায়। এসব ভাবতে ভাবতে বাজার শেষে ঘেমে নেয়ে যখন সে টোটো থেকে বাড়ির সামনে এসে নামলো, তখন প্রায় বিকেল ৫:৩০ বাজে। কলিং বেল বাজানোর প্রায় ১০ মিনিট পর দরজা খোলায় চিত্রা ওকে বকতে যাবে সেই মুহূর্তে সামনের দৃশ্য দেখে হাঁ হয়ে সবিস্ময়ে চেয়ে র‌ইলো সে কিছুক্ষণ! রেণুর উলুধ্বনির আওয়াজে তার চমক ভাঙলো। চিত্রা দেখলো, তার ১২ বছরের মেয়ে কি সুন্দরভাবে বরণডালা সাজিয়ে তাকে বরণ করছে। বরণের মাঝে মা মেয়েকে জিজ্ঞেস করল, কিরে কিসব পাগলামি করেছিস তুই? রেণু বলল, কেন মা! নতুন বাড়িতে পা রাখার আগে ঘরের লক্ষীকে তো বরণ করেই ঘরে তুলতে হয়, আমি তো তাই করছি। হ্যাঁ, চিত্রাদের নতুন বাড়িতে আজ গৃহপ্রবেশ হবে। তিলতিল করে টাকা জমিয়ে জায়গা কিনে শহরের নিরিবিলি এক কোণে এই বাড়ি বানিয়েছে সে, এখন নতুন করে সংসারটা সাজানোর পালা। 'সংসার' হুঁ, সংসারটা আর টিকলো ক‌ই তার! আসলে একটা সম্পর্ক সুস্থভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য দুজনের অবদান‌ই ভীষণভাবে জরুরি, একটু কমবেশি হলে সমস্যা নেই, তবে এক হাতে তালি কোনোদিনই বাজে না। বিয়ের পর থেকেই মানসিকভাবে চিত্রাকে নির্যাতন করত তার স্বামী, কোনো রাতে ধর্ষণ‌ও করত চিত্রাকে। হ্যাঁ, 'ধর্ষণ'। অবিবাহিত হোক বা বিবাহিত, সঙ্গীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে শারীরিক চাহিদা মেটানোর জন্য জোর খাটিয়ে সঙ্গম করতে চাওয়াকে ধর্ষণ‌ই বলে। এর মাঝেই চিত্রা একদিন জানতে পারলো সে সন্তানসম্ভবা। তার মনে হল, একটা বাচ্চা হলে হয়তো সব ঠিক হয়ে যাবে, এই ভেবে সে ধৈর্য্য ধরে থাকলো। কিন্তু না, বাচ্চা হ‌ওয়ার পর অত্যাচারের মাত্রাটা আরও বেড়ে গেল। রাগের মাথায় হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ওইটুকু দুধের শিশুটিকেও মারধোর করতো মাঝে মাঝে। এমনকি চিত্রাকে চাকরিটা ছেড়ে দিতেও বাধ্য করেছিল নিখিল। কিন্তু, সে ছাড়েনি। এই ব্যাংকের চাকরিটাই যে এখন তার লড়াইয়ের একমাত্র অস্ত্র, এ ছাড়লে চলবে কি করে! দাঁতে দাঁত চেপে এসব সহ্য করে গিয়েছে সে শুধু এই ভেবে যে, মেয়েটা একটু বড়ো হোক আর মাথা গোঁজার একটা আস্তানা অন্তত তৈরি করতে হবে আগে। এসব পুরোনো কথা ভাবতে ভাবতে হঠাৎ‌ই সম্মিলিত কন্ঠে উলুধ্বনি আর শঙ্খধ্বনির রোলে বর্তমানে ফিরলো মা-মেয়ে। দুজনে বাড়ির বাইরে এসে দেখলো, ওদের নতুন বাড়ি থেকে কিছুটা দূরত্বে পাড়ার মোড়ে পুজো মন্ডপে প্রতিমা বরণ করছে পাড়ার মহিলারা। আজ মহাষষ্ঠীর এই শুভ সন্ধ্যায় মা দুর্গা পাটে উঠবেন। মা দুর্গাকে ভক্তিভরে প্রণাম করে ঘরের দরজায় পা বাড়ালো ওরা দুজন। বাতাসে শিউলির সুরভী, মাঠে মাঠে কাশফুলের দোলা, ঢাকের বাড়ি আর নতুন জামার গন্ধে স্বর্গ থেকে মর্ত্যে মা দুর্গার আগমনের সাথে, পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে স্বাধীনতার মুক্ত মাটিতে আগমন হল চিত্রার-ও। মা দুর্গার ১০৮ টা নামের মধ্যে 'চিত্রা'-ও যে মায়ের অপর নাম।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register