কবিতায় দেবযানী ঘোষাল
বৃদ্ধাবস্থা
দশ সন্তানের মা...
চোখের সামনে চলে গেছে চার চারটি সন্তান...
ওপার বাংলায় স্বামীর মৃত্যুকালে
ছিল না কাছে...
এপার বাংলায় তখন তিনি
বড় পুত্রের কাছে।
দশটি সন্তানের ভরা সংসারে ঠাঁই
হয়নি কারো কাছে...
বারংবার পৌঁছে দিত ওরা মেজ ভাই এর কাছে।
একবার রাগে ক্ষোভে মেজ ভাইয়ের
বড় মেয়ে বলেছিল...
"তোমাদের কাউকে দেখতে হবে না ঠাকুমাকে... আমরাই দেখবো!"
সেই থেকে টানা পঁচিশটা বছর
মেজ ছেলের কাছে কাটিয়েছে বৃদ্ধা...
শাশুড়ি বউ এর মধ্যে বন্ধুত্ব না থাকলেও ঝগড়া হত কম।
রান্নাবান্নায় পারদর্শিনীর থেকে ওপার বাংলার বিভিন্ন পদ জেনেছিল বউমা।
রান্না করতে দিত না কোনদিনই মেজ বউমা...
কুটে বেটে দিত স্বেচ্ছায়...
চন্দনের মত মিহি হত গোটা মশলা...
শাক তরকারী কাটতো শৈল্পীক নিপুনতায়।
বৃদ্ধাকে দেখতে আসতো না কোন সন্তানেরা...
পাছে কিছু খরচ হয়!
প্রথম নাত জামাই বরণের সুখ...
প্রথম জামাই ষষ্ঠী...
প্রথম পুতিকে কোলে আগলে রাখা...
সব সুখ প্রাপ্তিই দিয়েছিল মেজ ছেলে...
চলে গেল মেজ বউমা তাঁর আগেই...
তাই আঘাত সামলাতে পারেনি, যখন মেজ ছেলের হাতের কনুই ভেঙে রক্তরক্তি...
চিরকালের মত কথা বন্ধ হয়ে গেল...
দিন রাতের নাতনীদের সেবায় বেঁচেছিল কয়েক মাস...
বিবাহিত নাতনিরা শ্বশুর বাড়ির সাপোর্টেই ঠাকুমার সেবায় মাসের পর মাস কাটিয়েছিল বাবার বাড়িতে...।
মনে মনে ভাবি...
যদি মেজ ছেলে না দেখতো?
হয়তো রাস্তার কোন ফুটপাতে পরে থাকতো...
এমন ঘটনা তো কতই শুনি...
বৃদ্ধাশ্রমের ঠিকানা ক'জন জানে??
আজ তো দশটা সন্তান জন্ম নেয়না কোন মায়ের গর্ভে...
একটা কি দুটো...
বাজার করা, রান্না করা, নাতি নাতনিদের টিউশনে নিয়ে যাওয়া...
কারন ছেলে বউ দু'জনেই কর্মরত...
একটু বেচাল হয়েছে কি...
ঠাঁই হয় বৃদ্ধাশ্রমে...
কাউকে দিয়ে আসা হয়...
কেউ বা যায় স্বেচ্ছায়....ll
0 Comments.