Sun 26 October 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে প্রদীপ গুপ্ত (পর্ব - ৩৮)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে প্রদীপ গুপ্ত (পর্ব - ৩৮)

বাউল রাজা তৃতীয় খণ্ড

অস্পষ্ট অবয়বে একজন সাধক প্রতীয়মান হচ্ছেন। সাথে অন্য একজন। দুজনের অস্পষ্ট চেহারাই কেন জানি ভীষণতর পরিচিত মনে হচ্ছে। বাউলনি ত্রস্ত হয়ে মাদুর থেকে উঠে দাঁড়ালেন। এসে জাপ্টে ধরলেন আমাকে। -- যেতে দেবো না, যেতে দেবো না ঠাকুর। তুমি নিজের ইচ্চেতে এসেচো, কেউ তোমায় দরে বেঁদে আনেনি, সেরকমই তুমি নিজের ইচ্চেতেই চলে যেও, কেউ তোমায় আটকে রাকপে না, কিন্তু তাই বলে কেউ তোমায় কেড়ে নিয়ে যেতে চাইলে আমিও তোমায় আমার পেম দে বেঁদে রেকে দেপো। কাউকে আমার তেকে তোমায় কেড়ে নে যেতে দেপো না। --- কী খ্যাপামো করচিস বল দেকি কিষ্ণামা? তোর সাদ্যি কী পদীপদাদাকে দরে বেঁইদে রাকপি? -- গোঁসাই, তুমিও চাও না পদীপদাদা একেনে আর আসে, তুমিও তালে মনে মনে আমার ঠাকুররে হিংসে কইরতে লেগেচো? নইলে তুমি তো অনেক আগে তেকেই বুইজতে পেরেচিলে ওরা আসচে, গোঁসাইকে ফিরিয়ে নে যেতে, তালেপরে তুমি কেনে আমায় সেসব জানাও নি? সাবদান কইরে দাও নি কেনে? আমি এ বিক্ষ আঁকড়ে তাকবো। আমি তার চরণ ছাইরবো নি ককনো। আমি কিছু বোঝার আগেই আমার মনে হতে লাগলো, আমি যেন ক্রমশ সকলের মাথা ছাড়িয়ে যাচ্ছি। আমার পায়ের গোড়ালি থেকে কিলবিল করে কীসব বেরিয়ে মাটির মধ্যে গেঁথে যাচ্ছে, আমার শরীর থেকে একের পর এক হাত বেরিয়ে আকাশের দিকে মেলে ধরছে নিজেদের, সেসব হাতের যেখানসেখান থেকে আঙুলের মতো ডালপালা - পাতারা ছড়িয়ে পড়ছে আমার অবয়বের চারদিকে। আর আমার শরীরকে জড়িয়ে ধরে বাউলনি আদর করছে আমার সর্বাঙ্গে, ওরও সারাটা শরীর জুড়ে ফুল আর পাতা, সে ফুলের স্বর্গীয় সৌরভে আমোদিত হচ্ছে চারপাশ, ওর লতাপাতার আদর যেন একতারার তারে আঙুল ছুঁইয়ে তুলছে সুর, দূরে বহদূরে পূবের আকাশে গোলাপি আভা, আকাশের এ রঙ আমি কোনোদিনও দেখিনি। দেখতে দেখতে আমার শরীরের পাতায় পাতায় ফুলের কুঁড়িতে ভরে উঠলো, সেই কুঁড়ি পূর্ণপ্রস্ফুটিত হয়ে থোকা থোকা ফুল হয়ে ফুটে উঠলো, কোত্থেকে হাজার হাজার প্রজাপতি আমার ফুলের মধু নিয়ে ঢেলে দিচ্ছে কৃষ্ণভামার শরীর জুড়ে ফুটে থাকা ফুলে। -- " জলে যেমন চাঁদ দেখা যায় ধরতে গেলে হাতে কে পায় তেমনি সে থাকে সদায় আছে আলোকে বসে -- অচিন দেশে বসতি ঘর দ্বি-দল পদ্মে বারাম তার দল নিরূপণ হবে যাহার ও সে দেখবি অনায়াসে -- আমি আবার ফের আমি হতে শুরু করলাম, আমার পদযুগল শিকড় মুক্ত হলো, শরীর থেকে বেরিয়ে আসা ডালপালা ফের যেন সেঁধিয়ে যেতে শুরু করলো শরীরে, আমি ধীরেধীরে ফের আমার অবয়ব ফিরে পেলাম, আমার হাঁটু জড়িয়ে ধরে আছে পাগলিনী বাউলনি। --- ঠাকুর এবেরে তুমি যাও, তোমাকে ওরা পিরিয়ে নিয়ে যাক, আমি আর বাধা দেপোনা। আমার এ জম্মের কাজ শেষ অয়েচে। আমি নিচ্চয় জানি পরের জম্মে তুমি শুদু আমারই জন্যে জন্মাপে। এই কিষ্ণভামা সে অপেক্কাতেই তাকিয়ে থাকপে গো ঠাকুর। আজ আমিও তোমার এ ঠাঁই ছেড়ে নিরুদ্দেশ হপো গো গোঁসাই, তুমিই শিক্কা দেচিলে যে বাউল জম্মে হিংসে কইরতে নেই গো, আজ যকন সেই তোমার বেতরেই, যাকে আমি আমার বাবার মতো, গুরুর মতো, আছ্রয় করে এয়েচি, হিংসের ছায়া দেইকতে পেনু তকন আর আমার এ ঠাঁয়ে তাকা চইলবে নি গো গোঁসাই। আমার তেকে তুমি তোমার দীক্কামন্তর ফিরিয়ে নাও। বিশুবাউলের গানের সুর তখনও ভেসে বেড়াচ্ছে বাতাসে। অচিন দেশে বসতি ঘর দ্বি-দল পদ্মে বারাম তার দল নিরূপণ হবে যাহার ও সে দেখবি অনায়াসে --- --- কী রে? তোরে না কইসিলাম এই দ্যাশে আর না আইতে? তুই কী ভাবছস, ভদ্দর ঘরের পোলা হইয়া তুই এই নোংরা বাউলনির লগে ঘর পাতবি? ভাগ্যিস কানাইদা আমারে কাইল সন্ধ্যাবেলাতেই খবরটা পাঠাইসে যে তুই এইখানে ফের আইছস? কোত্থেকে ধ্রুবদা এসে যেন ঘাড়ের ওপর পড়লেন। ক্রমশ
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register