Sat 25 October 2025
Cluster Coding Blog

গল্পেসল্পে অরবিন্দ মাজী

maro news
গল্পেসল্পে অরবিন্দ মাজী

কিডনি পাচার

ছোটুর বয়স তখন সাত, ওরা থাকতো রতনপুরের কলেজ মোড়ের পাশের একটি পাড়ায়, সেই সময়ে ওদের পাড়ায় এটি একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও খুব কম ছেলেমেয়েই স্কুলে যেতো, ছোটুও কোনদিন স্কুলে যায় নি, ছোটবেলাতে ওদের একটা দল ছিল, ওরা সবাই কলেজ মোড়ের একটি লাইন হোটেলের পাশ থেকে পোড়া বিড়ি কুড়িয়ে এনে সেগুলো লুকিয়ে লুকিয়ে ধূমপান করতো। সকাল হলেই ওদের প্রথম কাজ ছিল ঐ হোটেলের পাশ থেকে পোড়া বিড়ি কুড়িয়ে আনতে যাওয়া ,প্রতিদিনের মতো সেদিনও ওরা সবাই বিড়ি কুড়িয়ে আনতে গিয়েছিল ঐ হোটেলের পাশ থেকে। ছোটু ছিল একটু বোকা টাইপের, ওর ভালো নাম ছিল তপন, কিন্তু সেটাও সে ঠিক মতো জানত না, নিজেকে শুধু ছোটু বলেই জানত। বিড়ি কুড়োনোর সময় একজন ট্রাক ড্রাইভার ছোটুকে জিজ্ঞেস করেছিল- তোর নাম কি❓ - ছোটু। - বাড়ি কোথায়? - এখানেই। - বাড়িতে আর কে কে আছে? - মা আর দাদা। - বাবা নেই? - না, মরে গিয়েছে। -আমাদের সাথে যাবি? - কোথায়? - আমরা যেখানে যাবো, সেখানে। অনেক বিড়ি দেব তোকে, ভালো ভালো খাবার দেবো। - যাবো। -তাহলে গাড়িতে উঠে বস, আমাদের সাথে চল। ছোটু গাড়িতে উঠে বসলো। তারপর খালাসি আর ড্রাইভারের সাথে কথা বলতে বলতে কখন যে সে ঘুমিয়ে পড়েছিল, নিজেই বুঝতে পারে নি। যখন ঘুম ভাঙলো তখন সে দেখলো একটা হোটেলের পাশে গাড়িটা দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ করে খালাসি এসে বলোলো - নেমে আয় ভাত খাবি। - ভাতের সাথে মাছ দেবে? - মাছ, মাংস যা খুশি তাই খাবি, তাড়াতাড়ি নেমে আয়। ছোটু বলোলো তাহলে আমি মাংসই খাবো, অনেকদিন মাংস খাইনি। - ঠিক আছে বাবা তাই খাবি। - ছোটু মনের আনন্দে পেট ভরে মাংস ভাত খেলো। আবার গাড়ি ছুটতে লাগলো, ছোটু খালাসিকে জিজ্ঞেস করলো- আমরা কোথায় যাবো? - কেনো, আমাদের বাড়িতে। ওখানে তোকে রোজ মাংস ভাত খেতে দেবো। এসব শুনে ছোটু খুব খুশি হলো, বাড়ির কথা পুরোপুরি ভুলেই গেলো। এদিকে ছোটুকে খুঁজে খুঁজে হয়রাণ হয়ে পড়লো পাড়ার লোকজন, কিন্তু ওকে আর পাওয়া গেলো না। শেষমেশ ছোটুকে খুঁজে পাওয়ার হাল ওরা ছেড়েই দিলো। এদিকে ছোটুও বাড়ির কথা একেবারে ভুলে গেলো। শেষপর্যন্ত গাড়ি এসে থামলো গঙ্গার তীরে বাবুঘাটের কাছে। ওখানে মাল নামিয়ে গাড়িটা কিছু দূর গিয়ে থেমে গেলো, ড্রাইভার বলোলো- নেমে আয়, আমরা বাড়ি এসে গেছি। গাড়ি থেকে নেমে ছোটু বললো আমার যাবো কোথায়? বিড়ি খেতে ইচ্ছে করছে, সাথে সাথে খালাসি এক বান্ডিল বিড়ি এনে দিয়ে বললো- আর কি খাবি তুই। ছোটু বললো - এখন আর কিছু খাবো না, খিদে পেলেই বলবো। - ঠিক আছে, খিদে পেলে বলবি, তখন সবাই একসাথে খাবো। রাত যখন সাড়ে দশটার মতো তখন খালাসি হোটেল থেকে তড়কা আর রুটি নিয়ে এসে সবাই একসাথে খেতে বসলো, খাওয়া দাওয়া করে সাবাই ঘুমিয়ে পড়লো। পরের দিন সকালে ছোটু ঘুম থেকে উঠলো এবং একটা বিড়ি টানতে টানতে ড্রাইভারকে বলোলো - কাকু আর কাকিমা কোথায়? তাদের দেখছি না তো। - তোর কাকিমা একটু বাপের বাড়ি গেছে, কালকেই চলে আসবে। - কাকিমা এলে খুব মজা হবে, রোজ তাঁকে মাংস রাঁধতে বলবো। - তাই হবে, কিন্তু বাবা এখন কিছুটা মুড়ি আর চপ খেয়ে নিয়ে কয়েকটা জামা কাপড় কেচে ফেলতে হবে তোকে, আমরা তোর জন্য জামা আর প্যন্ট কিনতে একটু বাজারে যাবো, একঘন্টার মধ্যেই ফিরে আসবো। ওরা দুজনে ছোটুকে গোটা তিনেক জামা ও গোটা চারেক প্যান্ট এবং একটা সানলাইট সাবান দিয়ে বললো এগুলো সব কেচে রাখবি। দুপুরে তোকে মাংস ভাত খেতে দেবো। ঘন্টাখানেক পরে ওরা দুজনেই ফিরে এলো সাথে দুজন লোক নিয়ে এবং ছোটুকে বললো তুই এদের সঙ্গে চলে যা, এরাই মাপ নিয়ে তোর জামা প্যান্ট বানিয়ে দেবো। বেচারা ছোটু বুঝতেই পারলো না যে সে একটা কিডনি পাচার চক্রের হাতে বিক্রি হয়ে গেছে..
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register