- 10
 - 0
 
মেরুদণ্ড 
একটা চিড়িয়াখানা
বাবা বললে, ওই দেখ এটা বানর
লক্ষ লক্ষ বছর ধরে বিবর্তিত হয়েছে বানর প্রজাতি
সেই বিবর্তনের হাত ধরে আমাদের মেরুদণ্ডটি সোজা হয়েছে
দুটো হাত আর দুটো পা, গ্রীবা সহযোগে মাথা
বুদ্ধিতে শ্রেষ্ঠ প্রাণী মানুষ;
মান আর হুঁশ সবটাই মিলিয়ে আমরা মানুষ।
মেরুদণ্ড কি বাবা?
এই যে আমি তুমি দাঁড়িয়ে আছি সোজা হয়ে মাথা উঁচু করে
এটাই হলো শরীরের মেরুদণ্ড যা শরীরকে ঋজু রাখতে সাহায্য করে।
মানুষ তো সোজা হয়েই দাঁড়িয়ে থাকে বাবা!
তবে দাদু কেন বলেন? "মেরুদণ্ড সোজা রেখে মানুষের মত মানুষ হও।"
আমি তো মানুষই।
দাদু যেটা বলেন, তা হলো----
মেরুদণ্ড কেবল একটি শারীরিক অংশ নয়
এটি একটি প্রতীকী!
এটি মানুষের নৈতিকতার প্রতীক
দৃঢ়তার প্রতীক;অস্তিত্বের প্রতীক।
মেরুদণ্ড বেঁকে গেলে, অবক্ষয় হলে কিংবা ভেঙে গেলে
মানুষ আর মনুষ্যত্বের পরিচয় দিতে পারে না।
অন্ধকার, অবক্ষয়, সংকটের মুখোমুখি হয়
সুকুমার বৃত্তিগুলো অন্ধকারে মিশে যায়।
হামাগুড়ি দিয়ে গড্ডালিকা প্রবাহে ভেসে যায়
বোধের ঘরে অবনতি এসে বাসা বাঁধে
ঘুন পোকারা মানুষের মনুষ্যত্বকে কুরে কুরে খেয়ে ফেলে
মানুষের অস্তিত্ব সংকটে এসে দাঁড়ায়
কোন সংগ্রাম থাকে না, কোন যুক্তিতর্ক থাকে না;
চিন্তার পরিধি হ্রাস পায়, জ্ঞানের আলো আঁধারে নিমজ্জিত হয়।
এমনকি উঠে দাঁড়াবার শক্তিটুকু পর্যন্ত হারিয়ে ফেলে।
ভালো মন্দের জ্ঞান বিসর্জিত হয়।
কিছুতেই মাথা তুলতে পারে না, চোখে চোখ রাখতে পারে না
শুধু মুখ লুকায় মুখোশের আড়ালে।
মুখোশের আড়ালে শুধু মুখোশই পাওয়া যায়
শ্রেষ্ঠ প্রাণী মানুষের মুখ হারিয়ে যায় কোন গোপন গহবরে।
মেরুদণ্ড সোজা না থাকলে তাকে কি ভালো মানুষ বলে না!
না, বলে না।
হ্যাঁ, তবে বয়সের ভারে মেরুদণ্ড অনেক সময় বেঁকে যায়
সেটা শারীরিক বৈচিত্র্য।
আর মানুষের বিবেক-বিশ্বাস যখন অধঃপতনের রাস্তায় হাঁটে
সেই মেরুদণ্ড তখন শারীরিকভাবে সোজা থেকেও ভঙ্গুর।
তা বাস্তবে ন্যুব্জ মেরুদণ্ড আর অমানুষ।
এরা বড়ই অদ্ভুত প্রাণী!
এরা মানুষ হয়ে অমানুষ
এদের জন্মগত অর্জিত মেরুদণ্ড মেরুদণ্ডহীন
এরা মাথা নোয়ানোতেই গর্বিত।
তাই বুঝি দাদু অমন কথা বলেন, "দাদুভাই মেরুদণ্ড সোজা রেখে মানুষের মত মানুষ হও।"
হ্যাঁ বাবা!
ওই দিকে চল বাবা,দেখি ওদের মেরুদণ্ড সোজা না বক্র!
তাড়াতাড়ি চল...
চল চল চল...।
0 Comments.