Sat 01 November 2025
Cluster Coding Blog

কবিতায় বলরুমে সুমিতা মুখার্জ্জী

maro news
কবিতায় বলরুমে সুমিতা মুখার্জ্জী

পথের শেষ কোথায়

খবরের তোয়াক্কা না করে কেউ অদৃশ্য হলে মনে বড় আশঙ্কা জাগে, তবে আজ এই কঠিন সময়ে আমি কি একা?
এই তো কেষ্টচন্দ্রর (মানে কৃষ্ণা) সাথে কাল যখন ফোনে কথা হচ্ছিল, তখন সেই পথিকের কথাই বারবার উঠে আসছিল আলোচনায়। পথিককে পথের ওপর ছাপ রেখে সমানে দিকে এগিয়ে যেতে হয়, ফিরে তাকাতে নেই। ফিরে তাকালেই প্রত্যাশার বেড়ি তোমার পা চেপে ধরবে, তুমি যে এগোতে পারবেনা। তাই নির্মোহ হও বস্, নির্মোহ হও!
শ্রাবণের ভেজা আকাশের মতো যখন কোনো চোখ ভিজে থেকে যায় মেঘলা যাপনে, তখন সত্যি সত্যিই কি কোনো বুক আশা বাঁধতে পারে? কোনো মুখ আর ভাষা ফিরে পায়? বলোনা? তাই বলি নিজের জীবনের অঙ্কের হিসেবটা মেলাতে না পারলেও ভুল করোনা কখনো। প্রাপ্ত নম্বরের জায়গায় এমনিতেও শূন্য ওমনিতেও শূন্য! সেক্ষত্রে ভুলের বোঝা ঘাড়ে চাপিয়ে লাভ কি? এই জন্মের অঙ্কটা না হয় অসমাপ্তই থাক।
কেষ্টচন্দ্র বলছিল, আকাশে কালো মেঘ জমলে গঙ্গার জেটিতে একলা বসে থাকতে বড় ভালো লাগে। কথাটা শুনে আমারও মন কেমন করে উঠেছিল। প্রাননাথ চৌধুরী লেন, নন্দীবাড়ি, মুন্সীর মাঠ, রামেশ্বর স্কুল, ব্যাটারী ফ্যাক্টারী.. কতদিন যে যাওয়া হয়না ও পথে! পথ যেন আজও আমায় ডাকে! পথের সাথে মানুষের এক অনন্য বোঝাপড়া!
গ্রীষ্মকালের সন্ধ্যেবেলায় মহারাজ নন্দকুমার রোড ধরে পুরোনো পোষ্ট অফিসের পাশ দিয়ে গিরিনবাবুর ডাক্তারখানা ছাড়িয়ে যখন সোজা হাঁটতে থাকি তখন মনে হয় এ আমার ফেলা আসা পুরোনো অস্তিত্বের প্রমাণ পত্র। সে রাস্তার সাথে আজকের কলকাতার রাস্তা ঘাট মেলে না। দোকানপাটের আলো গুলোর মধ্যেও কেমন নষ্টালজিয়া! এ মায়ায় শরীর নেই তাই মনপোড়া গন্ধও পাওয়া যায়না।
আজ মনে হয় সব দেহই যেন বড় আপনার বড় পরিচিত। বরানগর মঠের উল্টোদিকের গলি দিয়ে একটু এগোলেই রতনবাবু ঘাট। এখন ভাবি, এরচেয়ে সত্যি এরচেয়ে শান্তি আর কিছুতে হয়না।
তোমার ফুরানো যখন একেবারেই ফুরিয়ে যাবে, যখন কিছুটি আর পড়ে থাকবেনা এজগতের হাওয়া বাতাসে, তখন কিসের দেওয়া নেওয়া আর কিসেরইবা চাওয়া পাওয়া, বলো? তবু যে মায়া বড় বিষম বস্তু! যে আমায় চায়না, মন তারজন্যই কেঁদে মরে! এ বোধহয় প্রকৃতির নিয়ম।
'মন' বড় অবুঝ! কোথায় কে!! অথচ আমি মনের জন্য হাহুতাশ করে মরে যাচ্ছি। বাস্তবের মাটিতে পা দিয়েও যন্ত্রনার শিকড়টাকেই লালন করে চলেছি মত্যুর মহীরুহ বানানোর জন্য।
যে মাটিতে সোঁদা গন্ধ নেই, ভাবের আদান প্রদান নেই, শুধু ছেড়ে যাওয়ার ব্যস্ততা, সেখানে না হয় নাইবা গড়লাম অক্ষরের ইতিবৃত্ত ।
বড় অবাক লাগে, যখন দেখি 'মন', এই আমিটা ছেড়ে অনেক দূর চলে গেছে! দাঁড়িয়ে থাকি কাঠামো ছাড়া প্রতিমার মতো। বুঝি, কেষ্টচন্দ্রর গঙ্গার জেটিতে আজ একাকীত্বর বড়ই অভাব!
চালচিত্রের গা বেয়ে পথ কেটে দেয় পোটো। আমি আবার হাঁটতে থাকি।
এ পথ যেন ফুরোয়না!
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register