Mon 20 October 2025
Cluster Coding Blog

গল্পেরা জোনাকি তে রীতা চক্রবর্তী (পর্ব - ৯)

maro news
গল্পেরা জোনাকি তে রীতা চক্রবর্তী (পর্ব - ৯)

নর্মদার পথে পথে

মূল মন্দিরের বাইরে যেখানে ওই ছোট ছোট দুটো হাতির স্ট্যাচু রয়েছে সেখানে বেশ ভিড় দেখে আমরাও এগিয়ে গেলাম। অবাক হয়ে দেখলাম লোকজন ওই ছোট হাতিটার ফোকরে মাথা ঢুকিয়ে দিয়ে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ছে আর একটু একটু করে এগিয়ে বড় হাতির পায়ের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে আসছে। মার্বেলের মেঝেতে শুয়ে পড়ার এমন খেলা মন্দ নয়। আমরাও এই খেলায় অংশগ্রহণ করতে চাই। আমাদের মধ্যে 'ছবি' মানে আমার বোনের মেজো ননদ একটু রোগা পাতলা মানুষ। ওকে যে কোন ধরনের ফাঁকফোকর থেকে গলিয়ে দেওয়া যাবে। তাই প্রথমেই ও গেল। ছোট হাতিটার চারপায়ের তলা দিয়ে বড় হাতির পায়ের ফোকর গলে বেড়িয়ে এল। এটা দেখে আমি মুগ্ধ। আনন্দের চোটে আমি আমার শারীরিক দুর্বলতার কথা বেমালুম ভুলে গেলাম। এটাও ভুলে গেছি যে, একটুআগে পরনের গরম সালোয়ার কামিজ ছাড়ার জন্য আমি ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। যাইহোক ছোট হাতির পায়ের ফাঁকে মাথা ঢুকিয়ে দিয়ে আমারসে এগিয়ে গেছি কিন্তু বড় হাতির পায়ের ফাঁকে যখন আমার আধখানা শরীর তখন ছোটহাতির পায়ের ফাঁকে আমার কোমর আটকে গেছে। একটুও নড়তে পাড়ছিনা। আমাকে যেন কেউ শক্ত করে ধরে রেখেছে। পায়ে জোর দিয়ে যত এগিয়ে যাবার চেষ্টা করছি ততই যেন আমার বাঁধন আরো শক্ত হচ্ছে। আশেপাশে প্রচুর ভিড় হয়ে গেছে। সবাই বলছে "হর নর্মদে হর" বোলিয়ে, আমি তাইই বলছি কিন্তু এতটুকু নড়তে পারছিনা। তখন মনেহচ্ছে আমাকে বোধহয় দু'টুকরো করে কেটে ধর মাথা আলাদাকরে বার করতে হবে। মাথাটা কেমন ঝিমঝিম করছে। কিছু ভাবতে পারছি না। হাত পা ছেড়ে দিয়ে "হর নর্মদে হর" বলে চলেছি। প্রায় একশো লোক জড়ো হয়ে গেছে ওখানে। সবাই চিৎকার করছে" হর নর্মদে হর"। আমিও হাতির পায়ের ফাঁকে আটকে পড়ে কাঁদছি আর "হর নর্মদে হর" বলে যাচ্ছি। একবারের জন্য মনে পড়ল না যে গায়ের জামাটা আস্তে আস্তে ওপর দিকে টানলেই সালোয়ারের কোমরটা হালকা হয়ে যায়। এরমধ্যেই মনেহল কেউ যেন আমার পায়ের তলায় পা মিলিয়ে আমাকে ঠেলছে। আমিও একটু একটু করে নড়তে পারছি। তখনই মনে পড়ল জামাটা একটু টেনে নিই। যেমন ভাবা তেমন কাজ। জামাটা ধীরে ধীরে টেনে যখন বুকের কাছে জড়ো করছি তখন কোমরটা আলগা হয়ে গেল। আমি ধীরে ধীরে এগোতে পারছি। তারপর ওই না'দেখা ব্যাক্তির পায়ের ঠেলাতে আমি বড় হাতির পায়ের ফাঁক থেকে বেরিয়ে এলাম। আমি তখন অঝোরে কাঁদছি। নাকের জলে চোখের জলে এমন অবস্থা যে সবকিছুই ঝাপসা হয়ে গেছে। তখন কেউ একজন আমার সামনে দাঁড়িয়ে গম্ভীর গলায় বললেন, " ম্যাঁয়নে আপকো পার করা দিয়া, তো মেরা পরনামী দো" । আমি চোখ মুছে দেখলাম অনেক লম্বা দুটো ধবধবে ফর্সা পা আর সাদা ধুতি পড়ে কেউ আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। হাপুস নয়নে কাঁদতে কাঁদতে ব্যাগে হাত ঢুকিয়েছি। মনের মধ্যে তখন সাইক্লোন চলছে। ভাবছি এই সজ্জনব্যক্তি আমাকে অবধারিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করলেন। টাকাপয়সা বেকার মনে হচ্ছে। কি হতো যদি উনি আমাকে হেল্প না করতেন? তখন আমার মুঠোয় যতগুলো টাকা একবারে উঠেছে সেগুলো ওই বাড়ানো হাতে দিয়ে দিয়েছি।

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register