Sun 26 October 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে প্রদীপ গুপ্ত (পর্ব - ১২)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে প্রদীপ গুপ্ত (পর্ব - ১২)

সুন্দরী মাকড়সা

ঘরে ঢোকার দরজাটাকে ছিটকিনি দিয়ে বন্ধ করলো ঋষি। একে একে মেঝের ভেতর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা জামাকাপড় পাটপাট করে ফের আলমারির তাকে সাজিয়ে রেখে হাঁড়িকড়াই গুলোকে গুছিয়ে রেখে টেবিলের কাগজপত্তরগুলোকে টেবিলে রাখতে গিয়েই থমকে দাঁড়ালো ও। ঘরে ঢুকে থাকতেই কেমন যেন টিকটিকি মরার মতো একটা বিকট দুর্গন্ধ ওর নাকে আসছিলো। এখন সেই দুর্গন্ধটা এসে যেন ঝাঁপিয়ে পড়লো ওর ওপর। পচা পানপাতার মতো কালো কিছু একটা লেপটে পড়ে আছে ওর মেঝেতে। ওটা হাত দিয়ে ধরতে গিয়েও হাতটা যেন নিজের থেকেই পিছিয়ে এলো। ওটা একটা পচে যাওয়া চামড়াই হবে। তবে কোথাকার আর কি পুরুষের না মহিলার সেটা ঠিক বোঝা গেলো না। গলার! নাকি বুকের? পিঠের চামড়া যে ওটা না সেবিষয়ে ঋষি নিশ্চিত। এখন সমস্যা হলো কীভাবে ওটাকে ঘর থেকে পরিষ্কার করবে ও? স্টিলের খন্তিটাকে ধরতে গিয়েও হাত সরিয়ে নিলো। চাকুটাকে দিয়েও ঋষি পচাগলা চামড়াটা ফেলতে চাইলো না। জানালার পাল্লার নীচে একটা ভাঙা কাঁচের টুকরো দেখেছিলো ঋষি। সেটা দিয়েই ফেলবে বলে মনস্থির করে জানালার কাছে যেতেই জানালার পাল্লায় রক্তের ছোপ নজরে এলো ওর। বেশ খানিকটা রক্ত লেগে আছে। কেউ যেন হোলির সময় বেলুনের ভেতরে রক্ত ভরে ওর জানালায় ছুঁড়ে মেরেছে। ঋষি আজ কিছুতেই ভয় পাবে না অথবা মাথা গরম করবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জানালার কাছে গিয়ে কাঁচের টুকরোটাকে কুড়িয়ে নিলো সে, কাঁচের টুকরোটাকে দিয়ে বেশ ভালো করে চেঁছেপুঁছে চামড়ার টুকরোটাকে তুলে ফেলে জানালা দিয়ে বাইরে ছুঁড়ে ফেলতে গিয়েই ঋষির চোখ আটকে গেলো। একজন অপরূপা সুন্দরী মহিলার অর্ধনগ্ন শরীর চিৎ হয়ে পড়ে আছে। ওর দুই স্তনের মাঝের অংশের চামড়াটা নেই, আর রক্তে ভেসে যাচ্ছে শরীরটা। চিৎকার করতে গিয়েও নিজেকে সামলে নিলো ঋষি। মহিলার চোখদুটো এমনভাবে উলটে আছে যে মহিলা যে মৃত অথবা ওঁকে মেরে ফেলা হয়েছে সে বিষয়ে যে কেউ নিশ্চত হবে। ঋষি দরজার ছিটকিনিটা খুলে দরজাটাকে ভেজিয়ে দুলটাকে ফের বুকপকেটে ভরে নিয়ে তরতর করে নেমে এলো দোতলা থেকে ওর ঘরের পেছন দিকটায়। যেখানে ভদ্রমহিলার মৃত শরীরটা শুইয়ে রাখা হয়েছিলো। কিন্তু কী আশ্চর্য ! অকুস্থলে পোঁছে ঋষি সেই মৃতা মহিলাকে তো দূরের কথা কোনোকিছুই দেখতে পেলো না। শুধু ওখানকার লতাপাতা আর মাটিটা যেন সামান্য থেঁৎলে আছে। ঋষি একটু ঝুঁকে পড়ে মাটিটাকে পরীক্ষা করতে শুরু করলো। ভদ্রমহিলার শরীরটা ওপর থেকে দেখে ও যা আন্দাজ করেছিলো সেটা বেশ ভারী শরীরের মহিলা বলেই মনে হয়েছিলো ওর। দুধেআলতা না হলেও বেশ ভালোই ফর্সা আর অবশ্যই সুন্দরী। যেভাবে ওর বুকে জমে থাকা রক্ত ওর বুক থেকে গড়িয়ে পড়ছিলো তাতে করে মাটিতেও রক্তের ছোপ লেগে না থাকাটা অস্বাভাবিক বলেই মনে হলো ওর। এছাড়া অতোভারী শরীর যদি দাঁড়িয়ে থেকেও পড়ে যায় তাহলেও শরীরের নীচেকার জমি আর গুল্মলতাদেএ আরো বেশী করে থেঁৎলান উচিত ছিলো। এ ছাড়া দোতলা থেকে অকুস্থলে আসতে ঋষির বড়জোর মিনিট দুয়েক লেগেছে, এ সময়টুকুর ভেতরেই এরকম একটা ভারী লাশকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া এটাও একপ্রকার অসম্ভব বলেই মনে হলো ওর। তাহলে কী ও যাকিছু দেখছে, অথবা উপলব্ধি করছে তাঁর কোনোটার সাথেই কি বর্তমান কালের কোনো যোগ নেই? সবটাই কী... ঋষির শরীরের প্রতিটি রোমকূপ যেন শিহরিত হয়ে ওঠে। ও ধীরেধীরে দোতলার সিঁড়িতে পা রাখে। ক্রমশ
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register