Thu 30 October 2025
Cluster Coding Blog

গল্পেরা জোনাকি তে প্রদীপ গুপ্ত

maro news
গল্পেরা জোনাকি তে প্রদীপ গুপ্ত

চোখ

হঠাৎ করেই চোখ দুটোর ওপর নজর পড়লো কেতনের। কিসের যেন একটা ঝিলিক। খুশীর! বেদনার! আনন্দের! বিষাদের! ঠিক কিসের ঝিলিক সেটা বুঝে উঠতে না পেরে ওর চোখদুটো সেই দুটো চোখের থেকে নামিয়ে নিলো কেতন। চোখদুটো ওর ভীষণ চেনা। অথচ কার সেটা ঠিক ঠাহর করে উঠতে পারছে না সে। সালোয়ারে সারাটা শরীর ঢাকা। ওড়না দিয়ে সারাটা মাথা থেকে নিয়ে ভুরুর নীচ পর্যন্ত বেড় দেওয়া। মুখের নীচের দিকটায় মাস্ক দিয়ে এমনভাবে মুড়ে রেখেছে মেয়েটি যে সারা শরীরে শুধু চোখদুটো ছাড়া আর কিচ্ছুটি দেখার উপায় নেই। আর সেই চোখদুটোতেই যে কী... মেট্রো ধরবে বলে সেন্ট্রাল স্টেশনে এসে দাঁড়িয়ে আছে কেতন। কবি সুভাষ যাওয়ার লাস্ট মেট্রো। শ্যামবাজার ক্রশ করে গেছে। মেডিকাল কলেজে ভর্তি অসুস্থ মাকে দেখে, রাতের এটেনডেন্টকে ওষুধপত্তর সবকিছু বুঝিয়ে দিয়ে এর আগে কোনোদিনই আর আসতে পারেনা সে। তার ওপর এই কোভিড সিচ্যুয়েশনে রাতে বাড়ি ফিরে জামাকাপড় ছেড়ে ওয়াসিং মেশিনে দিয়ে গিজারটা অন করে স্নান করা যে কতদূর ঝামেলা। মেয়েটি ওর থেকে একটু দূরেই দাঁড়িয়ে আছে। ওর দিকেই তাকিয়ে। কে মেয়েটি? কেতনের দুচোখ যেন নিজের থেকেই টেনে নিচ্ছে মেয়েটির চোখ। আর ওই দুচোখে সেই আশ্চর্যজনক দৃষ্টি। চোখ সরিয়েও যেন ঠিক স্বস্তি পায়না কেতন। একটু যেন হাসির ঝিলিক দেখলো ও। একদৃষ্টে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে মেয়েটি। সত্যি আজকাল মানুষগুলো যেন কেমন নির্লজ্জ হয়ে গেছে। ওকি তাহলে জিজ্ঞাসা করবে -- তুমি কে? ইউনিভার্সিটির কোনো বন্ধু কী? উঁহু, নিশ্চয়ই না। তাহলে এতোক্ষণে এসে নিশ্চয়ই... সবে মাস কয়েক হলো শহরতলির একটা কো এড কলেজে লেকচারার হিসেবে জয়েন করেছে কেতন। ওর কলেজের কোনো ছাত্রী হতে পারে? এরকম একজন স্মার্ট, ইয়াং, পাঁচফিট দশ ইঞ্চির স্যারকে নিয়ে ছাত্রীরা যে বেশ কপচায় সেটা কেতন জানে। এই তো সেদিন জিওগ্রাফির সুলতাদি ওকে ডেকে বলছিলো -- আরে তোমাকে নিয়ে তো রীতিমতো বেটিং শুরু হয়ে গেছে ব্যানার্জী! -- কীরকম? -- বুঝতে পারো না? ছাত্রীদের চোখমুখের দিকে লক্ষ্য রেখো, তাহলেই বুঝে যাবে। -- এই সেরেছে। বাপ ঠাকুর্দার অনেক পূন্যিবলে চাকরিটা জুটেছে। সেটা এবার না চলে যায়। দিদি প্লিজ। -- হা হা হা -- আমাকে প্লিজ বলে কীহবে? তারচেয়ে না হয় যেকোনো একজনকে...

করোনার সেকেন্ড ওয়েভের শেষে মাত্র কয়েকদিন ক্লাস হয়েই বন্ধ হয়ে গেলো কলেজ। আর ঠিক এইসময়েই মায়ের শরীর খারাপ হয়ে গেলো কেতনের।

কিন্তু ওই চোখদুটো! সারা শরীর মন জুড়ে কিরকম একটা অস্বস্তি শুরু হয়েছে ওর। এরভেতরে কখন যে ট্রেন এসেছে, কখন যে সেই ট্রেনে উঠে একটা সিটেও বসে পড়েছে ও, সেসবের কিছু খেয়ালই করেনি কেতন। আর কী আশ্চর্য, চোখদুটোও ঠিক ওর উল্টোদিকের সিটে বসে আছে। এখন কি চোখদুটোতে একটু কৌতুকের ঝিলিক? এই কোভিড অবস্থায় কতো মহিলাকেই তো দেখেছে কেতন, কিন্তু সারাটা শরীরে শুধুমাত্র দুটো চোখ, তাও আবার সেই দুটো চোখ শুধু যেন ওর দিকেই তাকিয়ে আছে, এরকম পরিস্থিতিতে ও আগে কোনোদিনও পড়েনি। কতোক্ষণ যে এভাবে কেটে গেছে কে জানে? হঠাৎ একটা ডাকে ওর হুঁশ ফিরলো। -- মাস্টারদাতেই নামবে তো নাকি? ঘোষিকা ঘোষণা করছেন, --স্টেশন মাস্টারদা সুরিয় সেন, টেশন মাস্টারদা সূর্যসেন, স্টেশন মাস্টারদা... -- এবারে একটা বিয়ে করে নাও কেতনদা। মাসিমার তো বয়েস হলো। উফফফ্, যেন ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়লো কেতনের। উষ্ণা। কোভিডের প্রথম ঢেউয়ের শেষে একজন ইঞ্জিনিয়ারকে বিয়ে করেছে। অথচ ওর সারাটা শরীর দিয়ে উষ্ণা নাকি কেতনকে ভালোবেসেছিলো। ওকে এতো ভালো করে দেখেছে কেতন, তাহলে কি চোখদুটোকেই ঠিকমতো দেখেনি? চোখছাড়া বাকী সবটা...

তোমরা কি এখন এন এস সি বোস রোডের ফ্লাটটাতেই থাকো উষ্ণা?

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register