Tue 28 October 2025
Cluster Coding Blog

গল্পেরা জোনাকি তে রীতা চক্রবর্তী (পর্ব - ১১)

maro news
গল্পেরা জোনাকি তে রীতা চক্রবর্তী (পর্ব - ১১)

নীল সবুজের লুকোচুরি

"একটা মজার কথা শোনো মা, স্যারের একটা পোষ্ট অপারেটিভ কন্ডিশন আছে আর সেটা খুবই অদ্ভুত।" --"সেটা কি? পেশেন্টের আবার কি কন্ডিশন?" --------

--"সেটাই তো বলছি। ডাক্তার আনসারি তোমাকে দেখতে চেয়েছেন, জানো! "-হাসতে হাসতে বলে মিঠি। জানোতো ভারী অদ্ভুত এই মানুষটা। এতবড় একজন নামকরা ডাক্তার আর কথা বলে ঠিক ছোটদের মতো। বলে কি না - "যে মায়ের মেয়ে এরকম রূপে লক্ষ্মী গুণে সরস্বতী, যে মেয়ের হাতের ছোঁয়ায় থেমে যাওয়া হৃৎপিন্ড আবার বাজনা বাজাতে সক্ষম হয় , তার মা ও তো কোনও অসাধারণ ব্যক্তিত্বই হবে, তাই না। সেজন্যই তাঁকে আমি ব্যক্তিগতভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই।"-- তুমি আমার সাথে যাবে মা ? অত্যন্ত আগ্রহ নিয়ে কথাগুলো বলে মিঠি মায়ের দিকে চুপ করে তাকিয়ে থাকে। সুমিতাও কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। তারপর মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে খুব শান্ত ভাবে বলে," উনি যখন এত আগ্রহ নিয়ে বলেছেন তখন সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেলে একদিন বাড়িতে নিমন্ত্রণ করিস। তখনই ওঁর আমাকে দেখা হয়ে যাবে আর তোরও রিটার্ন ট্রিটটা দেওয়া হয়ে যাবে।" আনন্দে মাকে জড়িয়ে ধরে সেদিন কত আদর করেছিল মিঠি যেন পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরতম উপহার পেয়েছে মায়ের কাছ থেকে। সেদিন মেয়েকে দেওয়া কথা রাখতে আজ সুমিতা খুব ব্যস্ত। ডাক্তার আনসারিকে নিয়ে মিঠি যেকোনো সময়ে চলে আসবে। মাদার মারিয়াও এসেছেন দিন দুয়েক আগে। সুমিতাও চাকরি থেকে অবসর নিয়েছে। নিজেকে ব্যস্ত রাখতে তাই সবসময়ই ঘরদোর খুব সুন্দরকরে সাজিয়ে রাখে। আজ একটু বিশেষভাবে "অলিসাম"-এর টব দিয়ে ড্রয়িংরুমটা সাজিয়েছে । ফুলের হাল্কা মিষ্টি গন্ধ এক অদ্ভুত আবেশ ছড়িয়ে ভরে রয়েছে গোটা বাড়ি জুড়ে। ওরা আসার আগে সবকিছু একবার ভালোকরে দেখে নিচ্ছে সুমিতা। মাদার মরিয়ম খুব নিচু স্বরে একটা গানের কলি গুনগুন করছেন , "হাম কো মন কি শক্তি দেনা মন বিজয় করে.."। সুমিতা মাদারের হাতটা নিজের মাথার ওপর ধরে রেখে বলে, "আমাকে তুমি শক্তির মন্ত্র দাও, শান্তির মন্ত্র দাও, ধৈর্য্যর মন্ত্র দাও।" মাদার ওর কপালে একটা পবিত্র চুম্বন এঁকে দেয়। মাথায় হাত রেখে বলে, "তুমি তো বিজয়া দুর্গা। মনের শক্তিতে তুমি একা এতগুলো বছর সবরকমের দুর্যোগ পার করে আজ এখানে পৌঁছেছ। ভয় তোমার কাছে পরাজিত হয়েছে অনেক আগেই। আজ সত্যের মুখোমুখি দাঁড়াতে কোনও ভয় নয়, কোনো লজ্জা নয়। মানুষের পৃথিবীতে মনুষ্যত্বের মর্যাদা রক্ষা করতে তুমি যা করেছ তা স্বমহিমায় উজ্জ্বল হয়ে থাকবে চির জীবন। এখন শান্ত হও। আমি তো আছিই তোমার সাথে।" এরমধ্যেই বাইরে গাড়ির আওয়াজ হলে মাদার দরজার সামনে এগিয়ে আসে। মিঠি ডাক্তার আনসারিকে নিয়ে খুব সাবধানে ভেতরে এলে মাদারের সাথে সৌজন্য বিনিময় হয়। দুজনে হাত তুলে নমস্কার প্রতিনমস্কার জানায়। মিঠির বাড়ির ডেকোরেশন, পর্দার কালার এমনকি টেবিলের উপরে রাখা ফুলের গামলা দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকেন ডাক্তার আনসারি। ফুলগুলোকে আলতো ছুঁয়ে জিজ্ঞেস করেন , "হেই ইয়ং লেডি, এই ডেকোরেশনটা কি তুমি করেছ?"-মিঠির চোখে মুখে একটা দুষ্টু হাসি খেলে যায়। প্রশ্নসূচক ভঙ্গিতে স্যারের দিকে তাকিয়ে থাকে। স্যার এই মুহূর্তে ঠিক কি বলবেন বুঝে উঠতে পারেন না। শুধু বলেন," এই ডেকোরেশনটা দেখে মনে হচ্ছে আমি আমার বাড়িতেই এসেছি, তাই জানতে চাইলাম।" বহুদিনের হারিয়ে যাওয়া একটা স্বপ্নকে ছুঁয়ে দেখতে ডঃ আনসারি ফুলের পাপড়িতে হাত রাখেন। মিঠিও স্যারকে কিছু না বলে ওখান থেকে চলে যায়। আর ভেতরে গিয়ে মায়ের হাত ধরে বাইরে এসে বলে, "দেখুন স্যার, এই সেই ম্যজিক লেডি যার ছোঁয়ায় সবকিছু সুন্দর হয়ে যায়। ইনি আমার মা, ডাক্তার সুমিতা মৈত্র।"

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register