Tue 28 October 2025
Cluster Coding Blog

গল্পেরা জোনাকি তে রীতা পাল (ছোট গল্প সিরিজ)

maro news
গল্পেরা জোনাকি তে রীতা পাল (ছোট গল্প সিরিজ)

একদিনের আলাদিন

ভোরের আলো চোখে পড়তেই প‍্যালা ধড়ফড় করে উঠে বসল। ঠিক তখনই মাসির ডাক,“এই প‍্যালা, হারামজাদা,এখনো ঘুম! বাবুরা এসে যাবে যে, চা এর জল বসা।” প‍্যালা চোখ রগরাতে রগরাতে ফুল্টুর দিকে চাইল। কাল সারারাত ঘুমাতে পারেনি, বুকের ব‍্যামোটায় কষ্ট পেয়েছে। দরমার দরজা ঠেলে বেড়িয়ে গেল প্যালা। বড় সসপ‍্যানে জল ফুটছে, মাসি চা বানাচ্ছে আর প‍্যালা সবাইকে বিস্কুট দিচ্ছে। দাসবাবু প্রাতঃভ্রমণ সেরে এই চায়ের দোকানেই চা খান আর পেপারটায় চোখ বুলিয়ে নেন। তারপর সবার সাথে জমিয়ে আড্ডা মেরে ৮ টায় বাজারের দিকে যান। প‍্যালা সুযোগ বুঝেই দাসবাবুকে জিজ্ঞাসা করে,“স্যার, এই মাসেরটা দেখে দেবেন ?” “প‍্যালা, তোকে না বলেছি লটারির টিকিট কেটে টাকা নষ্ট করবি না।” “দেখে দিন না স্যার” “যা নিয়ে আয়।” আসলে ১৩-১৪ বছরের ছেলেটার হতাশ মুখটা তার দেখতে ভাললাগে না। দাসবাবু জানেন জলো জায়গায় জল জমে। ভাগ্যবানের লটারি মেলে আর প‍্যালার যা কপাল। বছর আষ্টেক আগে তিনি এক্সিস মল এর কাছে কো-অপারেটিভে একটা জমি পান। ঠিক করেন অবসরের পর এখানেই পাকাপাকি ভাবে থাকবেন। দূর্গাপুরে একটি বড় বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্মে চাকরি করতেন। বেলাশেষে কলকাতাতেই ফিরলেন। প্রথম প্রথম জায়গাটা দারুণ লাগত, যেন স্বপ্নের শহর। পাকাপাকি ভাবে বছর খানেক থাকার পর দেখলেন ঝলমলে আলো, শপিং মল, ফ্লাইওভারের নিচে জমাট বাধা অন্ধকার, আর একটা জগৎ-জমির দখল, মাছের ভেড়ি, সিন্ডিকেট, বড় বড়ো দাদা ও তাদের চ‍্যালা-চামুন্ডা, একেবারে ক্রিমিনালের ডেন। প‍্যালার বাবাও নাকি অসামাজিক কাজের সাথে যুক্ত ছিল।একদিন সকালে বাজারের কাছে গলা কাটা লাশটা পাওয়া যায়। সেদিনই রাতে নতুন পট্টির বস্তি থেকে ওর মাকে কারা তুলে নিয়ে যায় তা কেউ জানে না।তারপর থেকেই প‍্যালার ঠিকানা মাসির এই গুমটি চা-এর দোকান । মাসির ছেলে ফুল্টুর হার্টে ফুটো, অপারেশন করাতে হবে। মাসি মাঝে মাঝেই ডাক্তারের কাছে ছোটে। সবারই এক কথা। টাকার অঙ্কশুনে চোখের জল মুছতে মুছতে ঘরে ফেরে। দাসবাবু চা-এর দাম দিয়ে বাজারের দিকে চলে যান। রাতে লটারি টিকিটের কথা মনে পড়ল, প‍্যালা হাতে গুঁজে দিয়েছিল। মাসির চোখে পড়লেই পিঠে লাঠির ঘা পড়বে। নাম্বারটা মিলিয়েই আনন্দে লাফিয়ে উঠলেন । ভোর হতেই মাসির দোকানে হাজির হলেন ,“এই প‍্যালা তোর 5 লক্ষ টাকা মিলেছে।” খবরটা দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়ল। যাতে প‍্যালা টাকাটা ঠিকমত পায় সব ব‍্যবস্থা করে দিলেন দাসবাবু। প‍্যালা কে ডেকে বললেন,“কি করবি টাকা?” “একটা হোটেল করব। মা’কে খুঁজব।” দাসবাবুর,রবি ঠাকুরের অসন্তোষের কারণ প্রবন্ধের একটা লাইন মনে পড়ে গেল, "দরকার জামা প‍্যান্টের কাপড়, জুটত মোজার কাপড়।" পরদিন প‍্যালার আর পাত্তা নেই। সবাই প‍্যালাকে খুঁজছে কিন্তু প‍্যালার কোথাও দেখা নেই। রাতে দরমার দরজা ঠেলতেই মাসি রে রে করে উঠল,“বেড় হ ঘর থেকে, খাওয়াচ্ছি পরাচ্ছি আর টাকা পেয়েই ফূর্তি মারতে চলে গেছিস? যেখানে ছিলিস সেখানেই যা ।” “সেখানে আমার থাকার জায়গা নেই।” “কি! আমার মুখে মুখে তর্ক! দাঁড়া দেখাচ্ছি মজা, বলেই বেদম মার।”

খিদের কাছে রাগও হার মানে, ঢকঢক করে দু’গ্লাস জল খেয়ে মাটিতে শুয়ে পড়ল। ফুল্টুু জামা প‍্যান্ট পড়ে রেডি। প‍্যালা হাওয়াই চটিটায় সেফটিপিন লাগাচ্ছিল এমন সময় দাসবাবুর গলা,“কি রে প‍্যালা, হলো ? গাড়ি বুক করেছি, ওকে আস্তে আস্তে নিয়ে আয়।" মাসি চুপচাপ গাড়িতে গিয়ে উঠল।তিলোত্তমার বুকে গাড়ি ছুটছে। কলকাতার এক বড় হসপিটালে ফুল্টুর অপারেশন হবে। গতকাল ফুল্টুর সব রিপোর্ট আর টাকা জমা করছে প‍্যালা, বাকি যেটুকু টাকা পড়ে আছে তা ঔষুধের খরচ।

হঠাৎ গাড়িটা ব্রেক কসল, রাস্তা বন্ধ করে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে খেলা হচ্ছে। অগ্যতা গাড়ি ঘুরিয়ে নিতে হল। গমগম করে মাইক বাজছে। প‍্যালার প্রশ্ন,“দাসবাবু, স্বাধীনতা কি?” মাইকে গান চলছে---- "এ্যায় মালিক তেরে বন্দে হাম্ আ্যইসে হে হামারই করম"।

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register