Tue 28 October 2025
Cluster Coding Blog

গল্পেরা জোনাকি তে রঞ্জনা বসু

maro news
গল্পেরা জোনাকি তে রঞ্জনা বসু

অকাল বসন্ত 

উপস্থিত সকলে একটু ফিসফাস,গুজগান করে পরস্পরকে ঠেলা দিতে থাকে। উসখুস করে সকলের মন। পঞ্চাশোর্ধ্ব হিরন্ময় সে সব গায়ে না মেখে লাল, সবুজ আবীরে রাঙিয়ে তুলেছে স্বাতীলেখাকে।

হিরন্ময় আর স্বাতীলেখা অফিস কলিগ। স্বাতীলেখার বাবা, হঠাৎই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অকালে সংসারের মায়া ত্যাগ করে চলে গেছেন পরলোকে। বিবাহযোগ্যা এক মেয়ে আর নাবালক পুত্রকে স্ত্রীর কাছে রেখে। নিয়ম মতো সরকারি চাকরিতে স্বাতীলেখাই বহাল হয়। তারপর থেকে দায় এবং দায়িত্বে জড়িয়ে কবে যে পয়তাল্লিশ বসন্ত পার করে ফেলেছে তা আর বুঝতে পারে না। এই সময়ের মধ্যে মা, গত হয়েছে। ছোট ভাইটি লেখাপড়া শিখে ভালো পদের চাকরি ও সময়মতো নিজের পছন্দের পাত্রীকে বিয়ে করে দুই সন্তানের পিতা হয়েছে। স্বাতীলেখার বিয়ের ব্যাপারে কারো কিছু মাথায় আসেনি।

পাঁচ ফুট চার ইঞ্চি লম্বা, গৌরবর্ণ,সুমুখশ্রী আর মেদহীন চেহারা শুধু নয়, মিষ্টভাষী, শান্ত স্বভাবের জন্য তার শত্রু কম। অপরদিকে হিরন্ময় স্পষ্ট বক্তা, কাজে দক্ষ, সময় সম্পর্কে সচেতন এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরব হওয়ার কারণে অনেকের কাছে অপ্রিয়। এহেন পরিস্থিতিতে কেউ খুব খুশি আবার কেউ পরশ্রীকাতর হয়ে পড়েছে। পাশ থেকে মি: চৌধুরী বলে উঠলেন, যৌবনের প্রেম উড়ে গিয়ে অন্য ডালে বসেছে, এখন বুড়ো বয়সে এছাড়া আর উপায় কি---

কিন্তু রমলা ব্যানার্জী এই সময়ের সদ্ব্যবহার করতে ভুল করে না। আগামী দুই দিন অফিস বন্ধ। আজ সবাইকে নিয়ে একজায়গায় হওয়া সম্ভব হয়েছে। হিরন্ময় আর স্বাতীলেখার অনুমতি নিয়ে ওদের শুভ পরিনয়ের কথাটি আনন্দের সঙ্গে ঘোষণা করে দিলেন। অনেকেই খুশি। দু, চারজন অকাল বসন্তে আক্রান্ত হয়েছে বলে ব্যঙ্গাত্মক আচরণ করতে ভুলে যাননি।

এই রমলাদির কাছে ওরা দুজন ভাইবোনের জায়গাটি পাকাপাকিভাবে পেয়ে গেছে। রমলা কে যেমন শ্রদ্ধা করে তেমনি স্নেহ উজার করে দেন তিনি। এই দুটি মনের মিলনে রমলার মতো খুশি আর কেউ হবে না। আগল ভাঙ্গা খুশি ছড়িয়ে দিতে আজ সবাইকে আবীর ছুঁইয়ে বড়ো তৃপ্তি পেলেন। স্বাতীলেখা আর হিরন্ময় আবীর পায়ে ছুঁইয়ে দিতেই রমলা দুজনকে বুকে জড়িয়ে নিলেন। সেই আশীর্বাদ দুটি হৃদয়ে অমূল্য সম্পদের সমান হয়ে রইল।

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register