Tue 28 October 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে কৌশিক চক্রবর্ত্তী (পর্ব - ২৬)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে কৌশিক চক্রবর্ত্তী (পর্ব - ২৬)

কলকাতার ছড়া

কলকাতার বাজার বলতে যে সমস্ত বাজার আজকের দিনে অতি পরিচিত, তার বাইরেও কালের চাকায় হারিয়ে যাওয়া কিছু বাজারকে বোঝায়। সাহেবদের প্রয়োজনে আশপাশ থেকে মানুষ ছুটে এসে এই শহরেই জিনিস পত্র বিক্রি করে গেছে দিনের পর দিন। কিন্তু আজ আর বাজারগুলোর সেই রূপ নেই। স্বাভাবিক ভাবেই পাল্টেছে অবয়ব, বদলেছে ক্রেতা বিক্রেতার ধরনও। কিন্তু ইতিহাস চাপা পড়ে থেকেছে সকলের অজান্তেই। চিনেবাজার বলতে শুধু চিনাদের বাজার যে নয় তা ছড়ার মধ্যে দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন প্রথম শরৎ পণ্ডিত বা জঙ্গীপুর সংবাদ ও বিদূষক পত্রিকার সম্পাদক পণ্ডিত শরৎ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। লোকে তাঁকে ভালোবেসে দাদাঠাকুর বলে ডাকতো। কথায় কথায় ছড়া বাঁধায় তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত। কrলকাতায় এসে একসময় রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বিদূষক ফেরি করতেন তিনি। আর মুখে মুখে আওড়াতেন ছড়া। চিনাবাজার ও মুর্গিহাটায় বাঙালিদের দোকান দেখে তিনি বলতেন -

মুর্গীহাটায় চুপ করে যাই কিনিতে রামপাখি দেখি সারি সারি স্টেশনারি আসল জিনিস ফাঁকি। চিনে বাজারেতে ভাবলাম চিনে থাকে খালি দেখি ঘরে ঘরে দোকান করে যতসব বাঙালি।

নামেই চিনাবাজার। আসলে বাজারে ঠাসা বাঙালিদের দোকান। কিন্তু একসময়ে কলকাতার বিকিকিনির হাটে মুর্গিহাটা বা চিনাবাজার ছিল উল্লেখযোগ্য। চিনদেশের হরেক জিনিসের সম্ভার সাজিয়ে এই বাজারের শুরু বলেই এমন নাম। কিন্তু হরেক জিনিস থাকলেও এই বাজারে ছিল অনেক বইয়ের দোকান। ইংরাজি সাহিত্য ও বিদেশী বইয়ের হরেক সম্ভার সাজিয়ে বসতো ব্যবসায়ীরা। এর কাছেই পর্তুগীজরা মুর্গি বিক্রি করতো। এদেশে আসবার পরে বিভিন্ন ভাবে লড়াই করে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখতে হয়েছিল পর্তুগীজদের। সেই মুর্গির হাট থেকেই মুর্গিহাটা। নিজেদের উপাসনার জন্য একটা গির্জাও তৈরি করেছিল পর্তুগীজরা। আজও ক্যানিং স্ট্রিটে দাঁড়িয়ে আছে মুর্গিহাটা গির্জা। আর তার সাথে জড়িয়ে আছে প্রাচীন ইতিহাসের গন্ধ। কলকাতা শহরটাকে নবাব সিরাজউদ্দৌলা একেবারে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়ে যাবার পরে খুব বিপদে পড়ে ইংরেজরা। পরে শহর আবার ফিরে পেলেও নিজেদের উপাসনালয় নিয়ে তৈরি হয় সঙ্কট। এই শহরে এসে বাদশা ও নবাবের চোখে ধুলো দিয়ে তারা তৈরি করে ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ। আর দুর্গর মধ্যেই তৈরি হয় সেন্ট অ্যানস গির্জা। ইংরেজ সাহেবদের উপাসনা করবার সেটিই ছিল প্রথম ধর্মস্থান। কিন্তু সিরাজের কামানে সেই গির্জা গুঁড়িয়ে গেলে এই পর্তুগীজ গির্জাকেই নিজেদের অস্থায়ী উপাসনালয়ে পরিণত করে ব্রিটিশরা। লালদিঘির পাশে সেন্ট জনস স্টোন চার্চ তৈরি না হওয়া অবধি এখানেই নিয়মিত প্রার্থনা করত তারা। মুর্গিহাটার গির্জা আজও ধরে রেখেছে কোম্পানির প্রথম দিকের সেই অস্তিত্ব রক্ষার ইতিহাস। আজ বড়বাজারে চিনাবাজার মুর্গিহাটা খুঁজতে গেলে আর পাওয়া যাবে না পুরনো কলকাতার পুরনো, কিন্তু সমস্ত জন অরণ্যের মধ্যেই চাপা পড়ে আছে আরো একটা কলোনিয়াল কলকাতা।

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register