Tue 28 October 2025
Cluster Coding Blog

গল্পেরা জোনাকি তে স্মার্ত পরিয়াল (ক্রমশ)

maro news
গল্পেরা জোনাকি তে স্মার্ত পরিয়াল (ক্রমশ)

হননের পরে

আজ প্রায় ত্রিশ বছর পর দীননাথ চৌধুরী জেল থেকে ছাড়া পেল।বয়স যথেষ্ট হয়েছে,চুল পেকে গিয়েছে,কিন্ত এখনো বাঁচার ইচ্ছে প্রবল।কেবলমাত্র একটি কারণেই সে এখনো বেঁচে থাকতে চায়,আর তা হল প্রতিশোধ।হ্যাঁ,সে দিন গুনতো যে কবে জেল থেকে বেরবে আর তার কাজ পূর্ণ করবে।দীননাথ চৌধুরী ছিল সিন্ডিকেটের লোক।তার মাথায় খুন,চোরাকারবারির মতো আরোপ লেগেই থাকতো।তবে কোনোদিন সে ধরা পড়েনি।প্রতিবারই উকিল বা মিথ্যে উইটনেস দিয়ে ঠিক ছাড়া পেয়ে যেতো।কিন্ত সেইবার আর সে বাঁচতে পারল না।ধরা পড়ে যায় তার সাথীদের বিশ্বাসঘাতকতার জন্য।কলকাতার এই ক্রাইম ফ্যামিলির মাথা ছিল শঙ্কর গাঙ্গুলী।এর ডানহাত ছিল গৌরীশঙ্কর।আর হিটম্যান ছিল কার্তিক দাস।তারপরেই আসে দীননাথ চৌধুরী,শঙ্করের প্রিয় পাত্র।সিন্ডিকেট মোটামুটি দীননাথের ধরা পড়ার সময়েই ভেঙে যায়।তবে জেল একমাত্র দীননাথেরই হয়।

আজ দীননাথের কলিজায় তেমন শক্তি নেই,কিন্ত মনের মধ্যে সেই আগুনটা আছে যাতে সে বাকিদের পুড়িয়ে শেষ করে দিতে পারে।দীননাথ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে,সে বাকিদের খুন করবে।কিছু প্রশ্নের উত্তর এখনো অজানা তার কাছে।সে প্রথমেই বেছে নেয় কার্তিক দাসকে।কার্তিক ব্যাচেলর,বিয়ে করেনি,নিজের বাড়িতে একাই থাকে।দীননাথ সোজা তার বাড়ি চলে যায়।কোটের পকেটে একটা পিস্তল,মুখে একটা ছোট্ট হাসি,এমন অবস্থায় কার্তিকের বাড়িতে এসে বেল বাজায়।সঙ্গে সঙ্গে কার্তিক এসে দরজা খুলে ভীষণভাবে চমকে উঠল।দীননাথ বলল,'চেনা যাচ্ছে?' কার্তিক ঢোক গিলে বলল,'দীননাথ!' -'বাড়িতে আসতে বলবে না?এতদিন পর এলাম।' -'না।না।এ অসম্ভব তুমি এখনো বেঁচে!' -'হ্যাঁ,আমাকে যে বেঁচে থাকতেই হতো।আর একদম চেঁচামেচি না।যা হবে ভেতরে।তোমাকে নিশ্চয়ই বোঝাতে হবে না পুরনো দিনে কীভাবে আমরা কাজ করতাম?' ঘরে ঢুকে সোফায় বসে কার্তিক বলল,'কী চাও তুমি?' -'আর কিছুই চাওয়ার নেই।কিছু কাজ বাকি আছে সেগুলো করতে এসেছি।' -'কী কাজ!দীননাথ আমাকে খুন করে কিন্ত তুমি অঞ্জলিকে….' -'ফিরে পাবো না।জানি।কিন্ত তার আত্মা যাতে শান্তি পায় সেই ব্যবস্থা করে দিয়ে যাবো।' -'না!আমাকে যা বলা হয়েছিল আমি করেছি।পুলিশেরা করতে বলেছিল।' উত্তেজিত হয়ে বলল দীননাথ,''যা দোষ সব আমার ছিল।অঞ্জলির কিচ্ছু ছিল না এসবে,কোনো কিছুতেই জড়িত ছিল না।তাহলে কেন তোমরা সবাই পুলিশের সাথে ডিল করে বেরিয়ে আসলে আর ওকে মরতে হল?' -'বাধ্য হয়েছিলাম।আমি এই কথাটাই বলেছিলাম।কিন্ত নিজের স্বাধীনতার থেকে বড়ো জিনিস কিচ্ছু হয় না ভাই।' -'অঞ্জলির অ্যাক্সিডেন্টটা ফেক ছিল তাই তো?' -'হুমম।জাস্ট আই ওয়াশ।' -'আমাকে পুলিশের হাতে তুলে দিলেও আমি তোমাকে ছেড়ে দিতাম।কিন্ত অঞ্জলির মৃত্যুটা আমি মানতে পারছি না।আমি নিজের জন্য আসিনি,ওর জন্য এসেছি।তোমাকে মরতেই হবে কার্তিক।' -'দীননাথ,দাঁড়াও শোনো।আমার কিছু বলার আছে।' -'আমার আর কিছুই শোনার নেই কার্তিক।তুমি আমার পিঠে ছুড়ি মারবে ভাবিনি।নিজের স্বাধীনতার চেয়ে বড়ো কিছুই হয় না,তাই না?তাই দিচ্ছি,তবে ভয় নেই,ব্যথা লাগবে না। চোখ বোজো….' কার্তিকের বুকের বাঁদিকে দুখানা গুলি ভরে দিল দীননাথ।

পরের তিনদিন দীননাথ কিচ্ছু করল না।এদিকে গোয়েন্দা দপ্তরে শোরগোল পড়ে গেল।পুলিশ ছেয়ে গেল কলকাতা শহরে।ফলে দীননাথের রাস্তায় অনেক কাঁটা দেখা দিতে লাগল।দীননাথের পরবর্তী শিকার গৌরীশঙ্কর।বর্তমানে পুরনো সব কাজ ছেড়ে তেলের ব্যবসায় নেমেছে।অবস্থা ভালো।স্ত্রী ও একটি ছেলে নিয়ে থাকে সে।বাড়িতে খুন করা দীননাথের পক্ষে সম্ভব নয়,তাই তাকে একটা নির্জন জায়গায় ডেকে নিয়ে যেতে হবে।সে ব্যবস্থাও করল দীননাথ। ক্লায়েন্টের নামে ফোন করে ডেকে নিয়ে আসে।তখন রাত নটা।আশেপাশে কেউ নেই।গৌরীশঙ্কর পার্কের বেঞ্চে গিয়ে বসে বলল,'নমস্কার।আপনি নিশ্চয়ই মিস্টার….' দীননাথের মুখটা দেখে গৌরীশঙ্করের মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেল।ভয়ে সে কিচ্ছু বলতে পারল না। দীননাথ বলল,'কী গৌরীদা?চেনা যাচ্ছে আমাকে?' -'দীননাথ,আমাকে ক্ষমা ক'রে দে।আমাকে….' -'পুলিশ যা বলেছিল তাই করেছিলে তাই তো?' -'বিশ্বাস কর আমাকে তুই।ওরা বলেছিল তোকে ওদের হাতে তুলে দিতে,তবেই আমরা সবাই ছাড়া পেয়ে যাবো।' -'আমার কথা ছাড়ো,সেসব জানি।কিন্ত অঞ্জলি?ও তো নির্দোষ ছিল।' -'আজ এতবছর পর এই কথাটা শুনতে তোর কেমন লাগবে জানি না।' 'তার মানে?' দীননাথ চমকে উঠে জিজ্ঞেস করল,'কী বলতে চাইছো?' -'আমাকে ক্ষমা করে দে ভাই।সত্যিটা আমাকেই বলতে হবে।ওই সময় অঞ্জলি অন্তঃসত্ত্বা ছিল।আমরা কেউ জানতাম না।অ্যাক্সিডেন্টের পর খবরটা পাই।খুব খারাপ লেগেছিল আমার।' দীননাথের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পরল।ও কী করবে বুঝে উঠতে পারল না।ওর ভেতরটা রাগ ও বেদনায় জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে।সঙ্গে সঙ্গে পকেট থেকে পিস্তলটা বার করে তাক করল গৌরীশঙ্করের দিকে।চোখে জল,হাত সামান্য কাঁপছে।গৌরীশঙ্কর বলল,'যেটা একটু আগেও বললাম,আমার কিচ্ছু করার ছিল না।তুই পালা এখান থেকে।নতুন ক'রে সব শুরু কর।পুলিশেরা কিন্ত চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।আমি আমার মুখ খুলব না,তুই যা পালিয়ে যা।' কম্পিত গলায় দীননাথ বলল,'নতুন করে শুরু করার মতো অবশিষ্ট কিচ্ছু নেই।আমার মধ্যে শুধু প্রতিশোধটাই বেঁচে আছে।' -'তুই আমাকে মারবি? আমার স্ত্রী আছে ছেলে আছে তাদের কী হবে?' -'তোমরা ভেবেছিলে অঞ্জলি মরলে আমার কী হবে?' -'তুই কেন বুঝতে….' কথা শেষ করার আগেই গৌরীশঙ্করের কপাল ভেদ করে একটা গুলি বেরিয়ে গেল।দীননাথ আজ অনেকদিন পর কাঁদল।গৌরীশঙ্করের লাশের পাশে প্রায় ত্রিশ মিনিট বসে থাকল।কেউ গুলির শব্দ পায়নি,কাক-পক্ষীও না।

ইতিমধ্যেই পুলিশেরা বুঝে গেছে দীননাথ চৌধুরী ফিরে এসেছে।আর এটাও বুঝে গেছে তার শেষ টার্গেট শঙ্কর গাঙ্গুলী।দীননাথ চৌধুরীর নাম খবরের কাগজ,নিউজ চ্যানেলে শোনা যেতে লাগল।গা ঢাকা দিয়ে আর কদিন থাকতে পারবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।কিন্ত শেষ কাজটা ওকে করতেই হবে।এদিকে শঙ্কর গাঙ্গুলীর বাড়িতে পুলিশের পাহারা।চব্বিশ ঘণ্টা তারা বাড়ির পাশে চক্কর মারছে।এমন অবস্থায় কী'করে ঢুকে মারবে সেই পরিকল্পনাই করছিল।তার চেহারা সম্পর্কে অবগত নয়,এমন কেউ এই শহরে নেই।তাই রুপ বদলানোই একমাত্র উপায়।মাথার চুল,গোঁফ,দাড়ি সব কেটে ফেলল।ছুড়ি দিয়ে গালের একপাশে একটা বড়ো দাগ কাটল।চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা।আর চেনার উপায় নেই।

ক্রমশ...

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register