Tue 28 October 2025
Cluster Coding Blog

কবিতায় স্বর্ণযুগে উজান উপাধ্যায় (গুচ্ছ কবিতা)

maro news
কবিতায় স্বর্ণযুগে উজান উপাধ্যায় (গুচ্ছ কবিতা)

১| এই সত্তা পেতেছি, আঁচল

আজ একটি পর্ণমোচী গাছে দেখেছি বৃষ্টির নাম, অপেক্ষার বানানে লেখা আছে। কিছুদিন ধরে এ পাড়ার বোবা কালা গলি দুচোখে গভীর ডাক বুনে জানিয়ে যাচ্ছে- অকপট। কিছু কথা মেঘ দেখতে পায়। অসংখ্য ঠোঁটের ফাঁকে ফাঁকে লুকিয়ে ঢেকেছে গাঢ় চিতা। এখানে আগুনে পোড়ে বুক, এখানে অপ্রেম কেনে সুখ। পিতামহ এ সমস্ত দিনে ঋণ নিত জলের আদর। বাবার জমানো পঙক্তিতে জড়ো করা অবৈধ জ্বর‍। মায়ের পুরনো শাড়িতে বৃষ্টিমন্ত্র লিখেছিল বাবা। যখন যুদ্ধের পৃথিবী, যখন জরায়ু নিঃস্ব, শীতলক্ষ্যা নামের তন্বী প্রেমিকার মতোই বিরল। সদরের দরজা শুকনো। জানালায় পিপাসার্ত জুঁই.... আঁচল খুলবে না তুমি আজও? ভেজাবেনা মুমূর্ষু বিভুঁই। চোখ খোলো, তোমার কান্নাটুকু আশরীর মৃত্যু দিয়ে ছুঁই।

২| ভালো লাগছে না

প্রতিটি অসুখ একা। প্রতিটি সুখের মতো তার কোনও কাচঢাকা মিউজিয়াম নেই। প্রতিটি অসুখ চায় নিভে যাক শহরের সব ল্যাম্পপোস্ট। একটা একটা করে তারা নিভে যাক। জোনাকির ছুটি হোক। সমুদ্রের পাড়ে আজ না জ্বলুক একটি হাউই। ইচ্ছে ঘোষণা করে, একটি নীরব শ্রোতা পা ফেলে ভিতরে ঢুকুক। একলা গুটিয়ে গিয়ে তাকে বলে- ভালো লাগছে না। নীরবতা হাত রাখে। অসুখের বিষণ্ণ চুলে। বলে- অসুখের বিপরীত শব্দটা কখনোই হয় কি রে 'সুখ'? প্রতিটি অসুখ একা। ওষুধের ডোজ নয়, মনে পড়ে প্রিয়তম মানুষের মুখ।

৩| অগত্যা জানাই আজ

অগত্যা জানিয়ে দিতে হয়, বোষ্টমীটি ফিরেই আসেনি। অতঃপর বাঁশিটি বাউল হতে ভুলে গেছে। অন্নপূর্ণা রাঁধেনি পায়েস। বিরল গাছের মুখে ফড়িং আর তোলেনি আয়ূধ। ছিন্ন চিঠির বুকে মাথা গুঁজে রাখেওনি মেঘ। একলা দুপুরবাঘ ছলছল চোখে হিংসার ইতিহাস পড়ে। পুকুরে যে মেয়ে উলঙ্গ ডুব দিয়েছিল, তার যে বাসন্তী রঙ লেপে রাখা মাছরাঙা শাড়ি সে কখন উড়ে গেছে রাজস্থানী বালির কবরে। আজও সে ফেরেনি। অবশেষে বলে আর কোনও রাস্তা নেই। পান্থনিবাস বলে নেই জলাশয়। জলের গভীর স্তনে নেই আর শীতলপাটিরা। যেখানে উষ্ণস্নান স্পর্শের আঁতুড় চেয়েছে, সেইখানে নষ্ট হাঁড়িকুড়ি। এমন অসুখ নেই আজ আর তেমন কোথাও, যার কাছে ভালবাসা পেয়ে শান্তিতে মরে যায় পাখি আর তার পাখিনীরা।

৪| দরজা জানালার গপ্পো

আমাদের প্রত্যেকের বাড়ি হাজারদুয়ারি। প্রতিটি দরজা নকল। প্রতিটি জানালা নকল। প্রতিটি আয়না ছদ্মবেশে বুক পেতে অবিকল ভুল ছবি হুবহু আসল বলে চালিয়ে দিচ্ছে। আমরা ঠেলছি, ধাক্কা দিচ্ছি, ভাঙচুর করতে চাইছি। ভেবেছি বাড়িটার মাথায় আকাশ, তলা দিয়ে কুলকুল করে বয়ে যাচ্ছে নদী। ভেবেছি বাড়িটাকে বুকে করে আগলাচ্ছে মাটি। আমাদের প্রতিটি বাড়ির প্রতিটি ঘরেই গুপ্তপথ, সুড়ঙ্গের মতো নেমে গেছে সুখের নকল সাজ, ঝরে গেছে বাতাসের ঝুটোমুক্তির ঢ্যাঙা প্রতিশ্রুতি। মেয়েরা পুরুষেরা ঘুঙুর নূপুর খোল কলতাল নিয়ে অন্নপ্রাশন থেকে বিবাহ পার হয়ে সৎকার ও শ্রাদ্ধাদি সেরে চতুর্মাত্রিক ঢেউ দিয়ে ভরেছে বাড়ির শূন্যতা। শূন্যতা তবুও বেড়েছে গুনোত্তর প্রগতির নিয়ম মেনে। আমাদের শরীরের হাজার দরজা, প্রেমের চাবিকাঠি ভালোবাসার স্টোরেজ থেকে বার করেছে প্রাসঙ্গিক জঞ্জালের হাড়গোড়। আমাদের বাড়িতে রোজ এক ভোর, সৌরকালের তাবিজ বেঁধে রেখে যায়। তারপর রাত্রি‌। আমরা হারিয়ে যাচ্ছি আমাদের জীবাত্মা পরমাত্মা আর অখন্ড শূন্যতায় ফেঁপে ওঠা মিথ্যে আকাশে। আজ খুব রোদ। কাল খুব মেঘ। পরশু বৃষ্টি। তারপর উৎসবের ঋতু হয়ে আমাদের বৃদ্ধ শুকনো চামড়ায় হরিণীর মৃত পাঁজর, বসন্তের রঙিন মুখোশ পর্ণমোচী গাছেদের সাথে মিলেমিশে প্রবচনের চাকা ভাঙে। আমাদের বাড়ি নেই ভাবলেও একটা বাড়ির মতো ভূতুড়ে আস্তানা হাঁ করে রোজরোজ গেলে আমাদের জন্মদিন আমাদের নিরুদ্দেশ সংবাদ ছাপিয়ে দেয় ঈশ্বরীর উদাস আঁচলে- অফসেট প্রিন্টিং এর যন্ত্র ঘর্ঘর শব্দে মহাকাশ ঘেমে ওঠে। মৃত দরজা মৃত জানালা অনর্গল ঝরে পড়তে থাকে হতভম্ব মহাকালের ঠোঁটে।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register