Tue 28 October 2025
Cluster Coding Blog

গল্পেরা জোনাকি তে রীতা পাল (ছোট গল্প সিরিজ)

maro news
গল্পেরা জোনাকি তে রীতা পাল (ছোট গল্প সিরিজ)

গামছা

বর্ষার মেঘ যেখানে দাঁড়ায় সেখানেই বৃষ্টি হয়। অবনিবাবু হাঁপাতে হাঁপাতে বাড়ি ঢুকলেন। কোনোমতে হাতমুখ ধুয়েই ডাকলেন —বড় বউমা,ও বড় বউমা শান্তিপুর থ্যেইকা যে গামছা গুলান আনছিলাম যত্ন ক্যইরা রাখছ তো ? রান্নাঘর থেকে- হ্যাঁ বাবা সব আছে। এখন যেটা ব্যবহার করেন সেটা ছাদে মেলা । এই নিন বাবা চা। গামছার খোঁজ করছিলেন কেন? —তুমি তো জানো বউমা আমরা বাইপাশের ধারে বন্ধুরা মিল্যা আড্ডা মারি। একখান হোডিং দ্যেইখা চক্ষু চড়ক গাছ। ম্যাইআ গুলান গামছা প্যইরা ফ্যাশান শো করতাছে।বড় বড় ক্যইরা তাতে লিখা,গামছা এহন বিদেশে যাইতাছে। — বাবা, গামছা অনেক আগেই বিদেশ পাড়ি দিয়েছে। বাংলাদেশের ফ্যাশান ডিজাইনার বিবি রাসেল-এর হাত ধরে। উনি গামছাকে আর্ন্তজাতিক ফ্যাশান করে তুলেছেন। এটা তো সুখবর বাবা। —কত কি তো হারালাম বউমা। দ্যেশ,গাঁ,একান্নবর্তি পরিবার সবুজ মাঠ,নদী,বালিহাঁস,সোনালী ডানার চিল,গাঙ শালিখ, বিলে ফোটা পদ্ম, মাটির হাঁড়িতে ভাত,কলা পাতায় খাওয়া ছোটবেলার বন্ধু,শেষে তোমার ছোট দেওর। কত্ত কষ্ট ক্যইরা বিদেশ পাঠাইলাম, ওহানেই রয়ে গেল। কয় কিনা,কি আছে তোমার পোড়া দেশে?কেউ ফেরা না বউমা। ছেলেটার কথা ভ্যাইবা ভ্যাইবা তোমাদের মা গত হলেন। সে দ্যাখতেও আ্যাইল না! অবনি বাবুর চোখের কোনটা ভিজে গেল। ধরা গলায় বললেন, —গামছা যে খেটে খাওয়া মানুষের এক টুকরো সুখ।চাষীরা গামছায় মুড়ি,চিড়া,গুড় ল্যইয়া মাঠে যায়, সোনার ফসল ফলায়। মাঝি কোমরে গামছাখান ব্যাইন্ধা মাছ ধরে। রিক্সাওয়ালাটা ক্লান্ত হ্যইয়া গামছায় ঘাম পোছে। মুটে মাথায় গামছার বিড়ে ক্যইরা মুট বয়, দিন শেষে ফুটপাতের মানুষগুলান গামছা পাইত্যা নিশ্চিন্তে ঘুমায়। বিদেশী পারফিউমের গন্ধ ছ্যাইড়া দেশী ঘেমো গন্ধ গামছার কি আর ভাললাগব? সদর দরজায় ডোর বেলের আওয়াজ শুনে —বাবা আপনার নাতনী এল,দরজাটা খুলে দিয়ে আসি। রিয়া ঢুকেই, —মা এক কাপ গরম কফি দাও। কি দাদু আজ এতো তাড়াতাড়ি গার্লফ্রেন্ড আসেনি বুঝি? —ছ্যেমড়ির কথা শোনো! তুই তো আছিস আবার কি হ্যইব? বলেই দাদু নাতনীতে হেসে উঠলো। আয় একটু স্হির হ্যইয়া বস দেখি। ও কি রে তোর গলায় কি ? —দাদু,এটা গামছার গয়না। এটাই তো এখন ফ্যাশান। কলেজে তো কতছেলে ঝারি মারছিল। — অ্যাঁ ! গলায় গামছা ফ্যাশান ? আমাদের সময় কেউ মারাগেলে কাঁধে গামছা ল্যইয়া সৎকারে যাইতাম। আর তোরা কিনা গলায় গামছার গয়না ঝুলাইতেছিস? একদিক্যা ভালোই দিদিভাই! আজকাল তো শশ্মানে যাইবার পাট চুকেই গেছে। শববাহি গাড়িই ল্যইয়া যায়। পোলাপান গো সময় কই শেষযাত্রা যাইবার? রান্নাঘর থেকে বড় বউমা, —বাবা ঝড় উঠেছে, আপনার গামছাটা ছাদে, তুলে নিন। অবনিবাবু ছাদে গিয়ে দেখলেন গামছা পাখির মতো ডানামেলে উড়ে যাচ্ছে। মাথার ওপর দিয়ে একটা উড়োজাহাজ মেঘের কোলে হারিয়ে যাচ্ছে। কয়েক ফোঁটা বৃষ্টির জল চোখের পাতা ভিজিয়ে দিচ্ছে।

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register