Mon 27 October 2025
Cluster Coding Blog

T3 || আমি ও রবীন্দ্রনাথ || সংখ্যায় সন্দীপ গাঙ্গুলী

maro news
T3 || আমি ও রবীন্দ্রনাথ || সংখ্যায় সন্দীপ গাঙ্গুলী

পার্থিব

শোবার ঘরের আয়নার ধুলো ঝাড়তে গিয়ে মেধার চোখ আটকে গেল, পাশেই রাখা পার্থর ছবিটার দিকে স্মৃতি স্তম্ভের মত দাঁড়িয়ে। অনেকবারই ছবিটা সরাতে চেয়েছে কিন্তু শেষ পর্যন্ত হয়ে ওঠে নি। আজ বিকালে আকাশে একটা সুন্দর রামধনু দেখে মেধা সাতরঙে হারিয়ে গিয়েছিল, কোনোটা ভালবাসার, কোনোটা ভালথাকার হাহাকারে আবার কোনোটা বা একাকিত্বের সামিয়ানায়। পার্থর সঙ্গে বিয়ের পরপরই ঠিক এরকমই এক স্মৃতি ঝরা বিকেলে মেধা হারিয়ে গেল, যেদিন একই রকম রামধনুর সাত রঙে তারা প্রথম ভেসে গিয়েছিল নারী পুরুষের চিরন্তন আকর্ষণে। পার্থ বিদেশে পাড়ি দিয়েছে প্রায় আজ প্রায়একুশ বছর, তার প্রধান কারণ মেধার মা হতে না পারা। প্রথম প্রথম বছরে একবার আসত , আসার কারণ মেধা না পার্থর মা সেটা বুঝতে পারত না। শেষ এসেছিল পার্থর মা মারা যাওয়ার একবছর পর, বছর দশেক আগে। ওদেশে ফিরে গিয়ে পার্থ তার নতুন পরিবারের ছবি পাঠিয়েছিল।পার্থ বিয়ে করেছে এটা মেধার অজানা ছিল। ওদের এক মেয়ে দিশার মুখে পার্থর প্রতিলিপি। মেধার মা না হতে পারার যন্ত্রনা কিছুটা লাঘব হয় দিশার ছবি দেখার পর। প্রতিবছর বিজয়ার পর পার্থ একবার ফোন করে, মেধা ব্যাকুল থাকে বছরের ওই একদিন দিশার সঙ্গে কথা বলার জন্যে, মনের আয়নায় ছবি আঁকে তার সুখী সংসারের বাস্তবায়নের। হঠাৎ টেলিফোনের শব্দে সম্বিৎ ফেরে মেধার কিন্তু ধরার আগেই কেটে যায়।দূর থেকে ভেসে আসে 'কার মিলন চাও বিরহী....' সম্ভবত মোহন সিং এর স্বর।আজ পঁচিশে বৈশাখ, মনে পড়ে গেল অনেকদিন আগে রবীন্দ্রসদনে মোহন বাবুর অনুষ্ঠানের কথা। পার্থর খুব প্রিয় শিল্পী ছিলেন। আবার টেলিফোনটা বেজে উঠল, মেধা রিসিভার ধরার কয়েকমিনিট পর কিছুটা বেসামাল হয়ে পড়ে, টেবিলটা ধরে নিজেকে সামলে নেন। মৃত্যু সজ্জায় শুয়ে পার্থর ফোন ডাক্তারের মাধ্যমে। অজানা রোগে দিশার মা মারা গেছে , পার্থ হয়তো আর কয়েক ঘন্টা...তাই দিশার দায়িত্ব দিতে চায় মেধাকে। নির্বাক মেধা দুচোখের অশ্রুধারায় নিজেকে সমর্পণ করে পার্থর কাছে, অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকে দিশার জন্য।

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register