Mon 27 October 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে কৌশিক চক্রবর্ত্তী (পর্ব - ৩৩)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে কৌশিক চক্রবর্ত্তী (পর্ব - ৩৩)

কলকাতার ছড়া 

কাশিমপুর রাজবাড়ী হাতি পর হাওদা ঘোড়া পর জিন্ জলদি আও জলদি আও ওয়ারেন হেস্টিংস ওয়ারেন হেস্টিংস। গভর্নর জেনারেল। কোম্পানির একেবারে সামান্য এক কর্মচারী থেকে দেশের একেবারে মাথা। এই ছিল সাহেবের যাত্রাপথ। কিন্তু পথটা সুখের ছিল বললেও হয় না। জীবনে চড়াই উতরাই কার না থাকে, হেস্টিংস সাহেবেরও ছিল। এদেশে আসবার পর বন্দি হয়ে নবাবের কারাগারেও দিন কাটাতে হয়েছে তাকে। কিন্তু কোম্পানির বদান্যতায় পরে গভর্নর জেনারেল পদে উত্তীর্ণ। তার উত্তরণ চমকপ্রদ। কিন্তু বড়লাট হবার পরে আর এক বিপদ। টাকার যোগান। বাংলাদেশ থেকে আবার টাকা চেয়েই চলেছে মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি। মহীশূর যুদ্ধে কোম্পানির তখন অগাধ খরচ। আর তার যোগান দিতে হয় হেস্টিংস সাহেবকে। কিন্তু এত টাকাই বা কই। তাও মুর্শিদাবাদ আর দিল্লীর চাহিদা মেটানো তো আছেই। সব মিলিয়ে হেস্টিংসের চিন্তার শেষ নেই। এত টাকার তাগাদায় অস্থির সাহেব তখন হাজির হন কাশীতে। উদ্দেশ্য রাজা চৈত সিংয়ের থেকে বকেয়া খাজনার টাকা আদায়। ইংরেজ কোম্পানির সাথে চুক্তি করেই তার সিংহাসনে বসা। বছরে ২২ লক্ষ টাকা খাজনা। কিন্তু অনেকটাই বকেয়া। ফলে সেখান থেকে টাকা আদায় করা ছাড়া আর কোনো উপায়ও দেখলেন না হেস্টিংস সাহেব। এদিকে লাটসাহেবকে সামনে দেখে হাত বাড়িয়ে অভ্যর্থনা করতে এগিয়ে এলেন চৈত সিং। কিন্তু সাহেব ছাড়বার পাত্র নন। হাতে হাতকড়া পরিয়ে বন্দি করলেন রাজাকে। কোম্পানির অন্ধকার কারাগারে বন্দি হলেন কাশীরাজ চৈত সিং। দানা বাঁধলো নগরের প্রজাবিদ্রোহ। প্রজাদরদী রাজার এই অবস্থা দেখে জোট বাঁধলো সৈন্যসামন্ত, প্রজা ও দেশবাসীরা। পরিস্থিতি ঘোরালো দেখে পালিয়ে বাঁচলেন সাহেব। কাশী থেকে চুনার। নিজেকে আত্মগোপন করতে লোকলস্কর নিয়ে চুনারে লুকিয়ে পড়লেন। সব মিলিয়ে প্রথম গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংসের পথ ছিল বড়ই দুর্গম। কিন্তু এত বাধাবিপত্তি পেরিয়েও কোম্পানির চোখের মণি হয়ে উঠতে তার সময় লাগেনি বেশি৷ আর তার এই চলার পথে সবচেয়ে কাছের যে মানুষটা পাশে ছিলেন তিনি কাশিমবাজারের কান্তবাবু, অর্থাৎ কৃষ্ণকান্ত নন্দী। এর আগেও তার কথা বলেছি। কাশিমবাজার রাজবাড়ীর প্রতিষ্ঠাতা পুরুষ তিনি। হেস্টিংস সাহেবের সব কাজের যেন ছায়াসঙ্গী। সে ভালো হোক আর খারাপ। দুর্দিনের দিনগুলোতেও কোম্পানির সুখে দুঃখে তার ভুমিকা মনে রাখবার মত। ফলে কাশীতে আক্রমণ করা থেকে পালিয়ে বেড়ানোর দিনেও হেস্টিংসের ছায়াসঙ্গী তিনিই। সাহেবদের দৈনন্দিন দিনলিপির ঘটনাও একসময় ছড়ায় ছড়ায় বেঁধে রাখে বাঙালী। চৈত সিং আর হেস্টিংসকে নিয়েও কলকাতা মুখে মুখে আওড়ালো - মহারাজা চেৎ সিং কাশীধামে ছিল হেস্টিংসের সনে তার বিবাদ ঘটিল মাঝ থেকে কান্তবাবু লুটে মজা নিল মহামূল্য ধনরত্ন ঘরে নিয়ে এল রাজার ঠাকুর আর সুন্দর দালান নিয়ে এসে বসায়েছে করিয়ে আপন পুকুর চুরির কথা জমিদারে জানে দালান চুরির কথা হেস্টিংস যে জানে। ওয়ারেন হেস্টিংস ছড়া তো মুখে মুখে ফিরলো। কিন্তু কী সেই দালান চুরি? মহারাজা চৈত সিংকে বন্দি করে হেস্টিংস, কান্তবাবু আর দলবল লুট চালালো কাশীর প্রাসাদে। অন্দরমহলের রাণী ও দাসীমহল হাত জড়ো করে ক্ষমা পেলেন ঠিকই, কিন্তু রক্ষা করতে পারলেন না প্রাসাদের সম্পদ। সোনা দানা অলঙ্কার তো ছিলই, এছাড়াও রক্ষা পেল না প্রাসাদের বহুমূল্য পাথরের দালানও। কান্তবাবু সেই দালানের পাথর তুলে এনে বসালেন কাশিমবাজারের বাড়িতে। এছাড়াও হেস্টিংসের বহুমূল্য ভেট ও উপহারে সেজে উঠল তার ভবন। ধীরে ধীরে তৈরি হল আজকের কাশিমবাজার রাজবাড়ী।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register