Mon 27 October 2025
Cluster Coding Blog

গদ্যের পোডিয়ামে অমিতাভ সরকার

maro news
গদ্যের পোডিয়ামে অমিতাভ সরকার

কবিতার সভাঘরে

সব কবিদেরকেই আমার খুব বিনয়ী লাগে। পত্রিকা প্রকাশের অনুষ্ঠানে অনেকের সাথে আলাপ হয়, ঝোলানো ব্যাগের ভারে এঁদের কাঁধটা বাঁ দিকে বেশি হেলে থাকে, সোজা হয়ে চলতে গিয়ে বাস্তবের মেঘ-রোদ্দুর অভিজ্ঞতায় কবিতার আলো ভরা খুশির মঞ্চে উঠতে কিছুটা বাধা ঠেকে, তবুও তাঁরা আসেন, গান-আবৃত্তি হয়, ভাষণ চলে। তবে এখানে কবিদের স্বরচিত কবিতাপাঠ কেউই তেমন মন দিয়ে শোনেন না, আমাদের মতো হঠাৎ কবিরা নিজেদের গাঁটের পয়সায় ছাপানো কবিতার বইয়ের রিভিউ জনপ্রিয় সংবাদপত্রে জায়গা পাওয়ানোর আশায় চেষ্টার এনার্জি খরচ করে দীর্ঘ সময় কষ্টের ট্রেন জার্নির পরেও নিজের ঘরে না গিয়ে দুপুর একটায় হাওড়া স্টেশনে নেমেও বিকেল চারটের ঠিক আগেই শিয়ালদহ পৌঁছে যায়, শহরে তেলের দাম বাড়তে থাকলেও স্বার্থের স্বাভাবিক প্রয়োজনের সময় এর সরবরাহে কোনোরূপ অসুবিধা হয় না, ফলতঃ ভুল অক্ষরে ছাপা কবিতার বই সম্পর্কের হাত ধরে হঠাৎই খুবই বিখ্যাত হয়ে যায়, সবাই ধন্য ধন্য করে, ভিড় বাড়তে থাকে চেনা-অচেনা বানান ভুলের, অনুষ্ঠানের মুখোশের আড়ালে সদ্য মুখ দেখানো পত্রিকাটিকে দেখে জীবনের কাগুজে পাতায় গান্ধীজি চশমার ফাঁকে চোখ টিপে মনে মনে হাসেন, তবে সেটা কেউই বুঝেও বুঝতে পারে না। প্রচারের তাপে এই আটত্রিশ ডিগ্রী গরমের মধ্যেও অক্ষরের মেঠো আগুনে মন পোহাতে আসে সবাই। কবিতা বিক্রি হয় রবিবারের ভর সন্ধ্যেবেলা, সহ-সম্পাদকরা খুচরো তিরিশ টাকার অনেকগুলো রসিদ কাটতে গিয়ে হিসেবে অনবরত ভুল করে ফেলেন, বিল বই থেকে কার্বন পেপার কবিতা শুনতে উড়ে যায়। কথার বৃষ্টি ছাতায় প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি, মালা গাঁথা স্তোকবাক্যের গতি রাজধানী এক্সপ্রেসের চেয়েও দ্বিগুণ গতিতে ছোটে, শব্দের পুষ্পবৃষ্টিতে প্রেক্ষাগৃহে মাইকগুলো অমায়িক হয়ে পড়ে। সঞ্চালিকা বিরক্ত হন, কিন্তু হাসির মাস্কে তা ঢাকা পড়ে যায় খুব সহজেই। পরের সংখ্যার রিভিউর জন্যে নির্ধারিত বই আলোচনার মগজাস্ত্রে এখানেই ঠিক হয়ে যায়, আর বাকিটা নাইবা বললাম। সবার সব লেখাই খুব সুন্দর, আলাপ জমে ওঠে, সেল্ফির চুমুকে হাতের বিস্কুটটা চা-য়ের জলে হাবুডুবু খেতে থাকে, দমবন্ধকর গরমে যুঁইফুলের গন্ধে ম ম ঘরে আমার গা গুলোতে শুরু করে। মুঠোফোনের ডিজিটাল কাঁটায় নির্ধারিত সময়ের আধ ঘন্টা পিছিয়ে সমাপ্তি সঙ্গীতের প্রবল বেসুর আওয়াজে উৎসাহী বন্ধুদের করতালির তালে তাল মিলিয়ে আমি বাড়ির পথে পা বাড়াই। কবিতাগুলো কলকাতার স্ট্রীট লাইটের আলো রেস্তোরাঁয় উজ্জ্বল হয়ে তাকায়। কবিদের সত্যিই দেখে খুব বিনয়ীই মনে হয়। আসলে মন থেকে এই স্রষ্টারা কি চান, বাইরের মানুষদের প্রতি এতটা আনুগত্য থাকা এই রক্তমাংসের মানুষগুলো নিজেদের সংসারে অন্যান্য কাজের বেলা ঠিক এতটাই সংবেদনশীল কিনা,সেই সত্যিটা তো বাইরে থেকে দেখে কিছুই বোঝা যায় না। আসলটা তাঁরাই বলতে পারবেন।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register