Mon 27 October 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে অয়ন ঘোষ (পর্ব - ৩)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে অয়ন ঘোষ (পর্ব - ৩)

বেদ - কথা

বেদের প্রধান বিভাগ দুটি মন্ত্র ও ব্রাহ্মণ। কাত্যায়ন বেদের লক্ষণ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন - "মন্ত্রব্রাহ্মণয়োর্বেদনামধেয়ম"। অর্থাৎ মন্ত্র ও ব্রাহ্মণ'কে একসাথে বেদ বলা হয়। সায়নাচার্য নিজের লেখা ঋকবেদের ভাষ্য ভূমিকায় এই দুই লক্ষণেরই উল্লেখ করেছেন - "মন্ত্রব্রাহ্মণাত্মক - শব্দরাশির্বেদঃ"। মন্ত্র ও ব্রাহ্মণ এই দুই প্রধান বিভাগের মধ্যে ব্রাহ্মণ ভাগের আবার দুইটি ভাগ আছে যথা আরণ্যক ও উপনিষদ।আরণ্যক ব্রাহ্মণের অন্তিম অংশ ও আর আরণ্যকের শেষ অংশ হল উপনিষদ। এই উপনিষদ অংশকে কেউ কেউ বেদান্ত নামে অভিহিত করেন। বেদান্ত বলতে বেদের অন্ত বা শেষ বোঝায়। অন্য অর্থে বেদের অনন্তও বোঝায়, মানে যার কোন শেষ বা সীমা নেই, যা অসীম। মন্ত্র অংশটিকে সংহিতা নামেই অভিহিত করা হয়ে থাকে। যদি বলি ঋক মন্ত্র, তার যা অর্থ বোঝায়, ঋক সংহিতা বললেও সেই একই অর্থ। তাহলে যেটা দাঁড়াল, বেদ বলতে চার প্রকার শাস্ত্র নির্দেশ করছে - মন্ত্র বা সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক ও উপনিষদ বা বেদান্ত। এবার যদি এই চারটি প্রকারভেদের লক্ষণ আলোচনা করি, তাহলে একরম দাঁড়াচ্ছে - মন্ত্র বা সংহিতা, প্রতি বেদের সূক্ত, স্তব, স্তুতি, আশীষবচন, প্রার্থনা ও যজ্ঞ বোঝাচ্ছে। ব্রাহ্মণ ভাগে রয়েছে মন্ত্র সম্বলিত আলোচনা, যজ্ঞের কথা ও সেগুলির সম্পাদন প্রক্রিয়ার বিস্তৃত আলোচনা, যজ্ঞের ফল নির্ভর কথা, শব্দের ব্যুৎপত্তি ও ছন্দ বিষয়ক জ্ঞান। এছাড়া আরো একটি কথা এখানে উল্লেখ্য যে বেদের চারটি ভাগের মধ্যে সবচেয়ে বড় হচ্ছে ব্রাহ্মণ। বাকি তিন ভাগের সমগ্রতা মিলিয়েও ব্রাহ্মণ ভাগের অর্ধেক হবে না। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, শুক্ল যজুর্বেদের মাধ্যন্দিম শাখার একটি ব্রাহ্মণের নাম শতপথ ব্রাহ্মণ, এতে একশত অধ্যায় আছে। ব্রাহ্মণ পর্বে যাগ যজ্ঞের মাধ্যমে আমাদের ব্যক্তিগত আশা আখাঙ্কা পূর্ণতার কথা বেশি করে বলা হয়েছে। আমরা জানি যে যখন আমাদের শারীরিক চাহিদা বা পেটের খিদে মিটে যায় তখন আমরা মনের প্রতি মনোযোগী হই বা আত্ম জিজ্ঞাসার পথে অগ্রসর হই। এখানেও ঠিক তেমনি ভাবে আমাদের উত্তরণ ঘটল। ব্রাহ্মণের যাগ যজ্ঞের কর্মকাণ্ডের দিকে থেকে আর্য ঋষিদের মন জ্ঞানযোগের প্রতি আকর্ষিত হলো। এর ফলেই এলো আরণ্যক। ঋষি চিত্ত দ্রব্য যজ্ঞের দিক হতে জ্ঞান যজ্ঞের দিকে নির্দেশিত হলো আরণ্যকের মধ্যে। আরণ্যক তাই আধ্যাত্মিক সাধনার আদি চরণ। অরণ্যকে যে আধ্যাত্মিক জিজ্ঞাসার সূচনা হয়েছিল তাই প্রাণ পেলো ও পরাকাষ্ঠা হয়ে উঠল উপনিষদে। সৃষ্টিতত্ত্ব, আত্মার অনুসন্ধান, জীবাত্মা ও পরমাত্মা তত্ত্ব, ব্রহ্ম জিজ্ঞাসা, মোক্ষ কথা বিশদে আলোচিত হয়েছে উপনিষদে। তাহলে যেটি দেখা গেলো, ব্রাহ্মণ ও উপনিষদের মধ্যে রয়েছে আরণ্যক। অনেক পন্ডিত আবার আরণ্যক ও উপনিষদেকে একর্থে দেখার কথা বলেছেন যেহেতু এদের উদ্দেশ্যের মধ্যে মিল আছে। এই আলোচনা থেকে এটাই স্পষ্ট হলো সমগ্র বেদ দুটি কাণ্ডে বিভক্ত - কর্মকান্ড জ্ঞানকান্ড। চলবে..
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register