Mon 27 October 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে রূপক সান্যাল (পর্ব - ২)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে রূপক সান্যাল (পর্ব - ২)

দখল

  শেষ রাতের দিকে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল সৌমিলির। মনে হলো কে যেন বুকের ওপর চেপে বসেছে। দম বন্ধ হয়ে আসছিলো ওর। বিছানার ওপর উঠে বসলো, হাত বাড়িয়ে জলের বোতলটা নিয়ে গলায় জল ঢাললো ঢকঢক করে। তারপর ভাবতে শুরু করলো, কে এসেছিলো ঘুমের মধ্যে? কে তার বুকের ওপর চেপে বসেছিলো? দাঁতে দাঁত কামড়ে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে, তারপর আবার শুয়ে পড়ে সৌ্মিলি। এরকম ধোঁয়াশা তার ভালো লাগে না, সে চায় স্পষ্টতা। স্বপ্নে দেখা মানুষটার মুখ সে মনে করতে পারছে না কিছুতেই। মাথার ভেতরে ক্রমাগত আঁচড় কাটতে থাকতে কেউ, খুব কষ্ট হয় ওর। চোখ বুজে থাকতে থাকতে হঠাৎ মনে পড়ে যায় মণিকর্ণিকার কথা। শেষরাতে ভাসাভাসা ঘুমের মধ্যে স্বপ্নে এসেছিলো ও’ই। হ্যাঁ, এবার চিনতে পেরেছে সৌ্মিলি। আর সাথে সাথে মনে পড়ে যায় মণীশের কথাও। সেই মণীশ, যে মনিকর্ণিকাকে না দেখে থাকতে পারেনি একদিনও। সেই মনিকর্ণিকা, যে একদিন সৌমিলি’কে বলেছিল, “মণীশ আমার রূপে মুগ্ধ। ওকে আমি আমার সবটুকু দিয়ে বেঁধে রেখেছি। ওকে কেউ কেড়ে নিতে পারবে না আমার কাছ থেকে।” — সবটুকু মানে? কী দিয়েছিস তুই? এর কোনও উত্তর মেলেনি। তবে আজও অটুট আছে মণীশ আর মণিকর্ণিকার বন্ধন, খবর পেয়েছে সৌমিলি। প্রেম ভালোবাসা বিষয়ে সৌমিলি’র মন তেমন কিছু দুর্বল ছিল না কোনদিন। তাই প্রেমিক বা একজন পুরুষ হিসেবে মণীশ সম্পর্কে বাড়তি কৌতূহল ছিল না তার। কিন্তু ছিনিয়ে নিতে ভালো লাগে সৌমিলির। মণীশের প্রতি প্রেম বা ভালোবাসা থেকে নয়, বরং মণিকর্ণিকার কাছ থেকে মণীশকে কেড়ে নেওয়ার মধ্যেই তার সুখ। এতদিন পর আজ হঠাৎ সৌমিলি’র মনে হলো যে, মনিকর্ণিকা’র ওই কথাগুলোর মধ্যে ছিল তীব্র অহংকার। ও নাকি বেঁধে রেখেছে মণীশকে। কিসের এত অহংকার ওর? রূপের? কে জানে। সৌ্মিলির রূপ নেই, অন্তত মণিকর্ণিকার মত নেই। তবে তার বুদ্ধি আছে, আছে জেদ, আছে কৌশল। এতদিন সৌমিলি’র চাহিদার মধ্যে ছিল শুধু জড়বস্তু, যেমন ঘড়ি সাইকেল মোবাইল স্কুটি, নানান কসমেটিক্স— এইসব। এই প্রথম তার মধ্যে জেগে উঠলো একটা জলজ্যান্ত মানুষকে হাতের নাগালে পাবার আকাঙ্খা। সৌজন্যে শেষরাতের এই স্বপ্ন। মণীশের প্রতি ভালোবাসার কোনও আকুতি নেই, শুধু মনিকর্ণিকার রূপের দেমাক আর তার অহংকারের দেওয়াল বুলডোজার চালিয়ে মাটিতে মিশিয়ে দিতে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে সৌমিলি। বহুদিন বাদে আবার জেগে উঠেছে তার পুরনো প্রতিশোধস্পৃহা। সে জেনেছে, মনিকর্ণিকা আর মণীশের এখনো বিয়ে হয়নি। মণীশ চাকরি করে না, স্থায়ী রোজগারও নেই। মনিকর্ণিকা’র বাবা রাজি হচ্ছেন না এখানে বিয়ে দিতে, তিনি অন্যত্র মেয়ের জন্য পাত্র দেখছেন। আবার মেয়েও অন্য কারুকে বিয়ে করতে রাজি নয়। সৌমিলি মনে মনে স্থির করে ফেলে, মণীশ’কে তার চাই, যে করেই হোক। কী নেই তার? ওসব রূপ-টুপ না থাকুক, অমন একটা ভালো বেতনের চাকরি আছে তো! দরকার হলে মণীশ’কে সে সারা জীবন ঘরে বসিয়ে খাওয়াবে, তবু মণীশকে সে বিয়ে করবেই। কিন্তু মণীশ যদি রাজি না হয়? সহজ কথায় রাজি না হলে অন্য বুদ্ধি বের করবে সৌমিলি। প্রয়োজনে ছিনিয়ে নেবে, দখল করবে। এরকম ভাবতে ভাবতেই একসময় আবার ঘুমিয়ে পড়লো সৌ্মিলি।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register