Mon 27 October 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে অয়ন ঘোষ (পর্ব - ৬)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে অয়ন ঘোষ (পর্ব - ৬)

বেদ - কথা

আগেই বলেছি বেদের দুটি অংশ মূলত একটি কর্মকাণ্ড ও একটি জ্ঞানকাণ্ড। কর্মকাণ্ডের ব্রাহ্মণগ্রন্থে যজ্ঞের বিবিধ প্রশংসা করা হয়েছে। তেমনই একটি সুক্ত রয়েছে যেখানে যজ্ঞকে নৌকার সাথে তুলনা করা হয়েছে - "যজ্ঞো বৈ সুতর্মা নৌঃ" যজ্ঞরূপী নৌকা মানুষকে অনায়াসে ভবনদী বা এই জীবন নদী পার করাতে সক্ষম। উপনিষদ হচ্ছে জ্ঞানকাণ্ড এখানে ক্রিয়াবহুল যজ্ঞের নিন্দা করা হয়েছে অনেক অংশে এবং জ্ঞানচর্চা ও জ্ঞানপিপাসাকে উচ্চ স্থান দেওয়া হয়েছে। যেমন মুণ্ডক উপনিষদের একটি প্রবচনে দেখা যাচ্ছে যজ্ঞকে নৌকার সাথে তুলনা করে বলা হচ্ছে এই নৌকা দৃঢ় নয়। এই নৌকা ভবসাগর পার করাতে সক্ষম নয় - "প্লবা হ্যেতে অদৃঢ়া যজ্ঞরূপাঃ"। একমাত্র ঐশী রূপ নৌকাই জীবন নদী পার করাতে সক্ষম। মন্ত্র বলিতে ঋক সাম যজুঃ ও অথর্ব এই চারটি বেদের সংগীতা অংশকে বোঝায় মন্ত্র শব্দটি এসেছে মন ধাতু থেকে এই শব্দের আক্ষরিক অর্থ মনন চারটি বেদ ছাড়াও ছটি বেদাঙ্গ রয়েছে এই বেদাঙ্গ গুলির মধ্যে নিরুক্ত একটি বেদাঙ্গ এর রচয়িতা যাস্ক ঋষি। বেদে উল্লিখিত অনেক শব্দের অর্থ ও ব্যুৎপত্তি এই গ্রন্থে রয়েছে মন্ত্র শব্দটি সম্বন্ধে ঋষি যাস্ক বলেছেন "মন্ত্রা মননাৎ" মনন অর্থাৎ যাহা মনন যোগ্য তাহাই মন্ত্র। এবার এবার দেখা যাক কার মনন? যজ্ঞে যে দেবতার উদ্দেশ্যে আপনি আহুতি দিচ্ছেন ফল লাভের উদ্দেশ্যে, সেই দেবতার মননই হল মন্ত্র। নিরুক্ত বেদাঙ্গের টীকাকার পন্ডিত দুর্গাচার্য্য মহাশয়ের কথা অনুযায়ী বেদের মন্ত্র থেকে প্রধানত তিন প্রকার মনন অথবা বোধ সম্ভব, যথা - আধিদৈবিক, আধ্যাত্বিক ও আধিযাজ্ঞিক। আগেই বলেছি মন্ত্রের ওপর নাম সংহিতা। তাই প্রতিটি বেদের মন্ত্র অংশকে সংহিতা বলা হয়ে থাকে। যেমন ঋগ্বেদে মন্ত্র অংশ ঋকসংহিতা, সামবেদের সামসংহিতা, যজুঃবেদের যজুঃসংহিতা, অথর্ব বেদের অথর্বসংহিতা। একেবারে প্রথমে বেদ অখণ্ড ছিল। ঋষি পরাশর ও সত্যবতীর পুত্র মহর্ষি কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদকে ঋক, সাম, যজুঃ ও অথর্ব এই চারটি ভাগে বিভক্ত করেন বলে জানা যায়। এই কারণে তাঁর নাম হয় বেদব্যাস। মহাভারত ও পুরান কথায় এই ধারণার সমর্থন পরিলক্ষিত হয়। শ্রীমদ্ভগবতের এই শ্লোকটি প্রণিধান যোগ্য - পরাশরাং সত্যবত্যামংশাংশকলয়া বিভুঃ অবতীর্ণো মহাভাগো বেদং চতূর্বিধম্ । এর অর্থ হলো, ঋষি পরাশরের ঔরসে সত্যবতীর গর্ভে বেদব্যাস রূপে পরমেশ বিভু অবতীর্ণ হয়ে বেদকে চারি ভাগে বিভক্ত করেন। যেহেতু পূর্বে একই ছিল তাই চারটি বেদের মধ্যেই এক সুস্পষ্ট একত্ব লক্ষ্য করা যায়। ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বেদ চারটি আলাদা করা হলেও একটি অখণ্ড সূত্র প্রবহমান চারটি বেদের মধ্যেই।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register