Mon 27 October 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে রূপক সান্যাল (অন্তিম পর্ব)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে রূপক সান্যাল (অন্তিম পর্ব)

দখল

রাত একটা বেজে দশ। ঘুমিয়ে কাদা হয়ে আছে মণীশ,শোনা যাচ্ছে তার মৃদু অথচ গভীর নাক ডাকার শব্দ। কিছুদিন হলো রাতে একদম ঘুম হচ্ছে না সৌমিলির। দুপুরবেলায় তার চোখে যত রাজ্যের ঘুম এসে জড়ো হয়। অফিসে কাজের মধ্যে হঠাৎ সে ঘুমিয়ে পড়ে। মণীশের বাঁ-হাতটা সৌমিলির বুকের ওপর রাখা ছিল। সেই হাতটা আলতো করে নামিয়ে রেখে বিছানায় উঠে বসলো সৌমিলি। পাশেই টেবিলের ওপর রাখা জলের বোতলটা থেকে ঢকঢক করে জল খেলো কিছুটা। তারপর নেমে এলো বিছানা থকে। আবার সে আয়নার সামনে এসে দাঁড়ালো। আজ হঠাৎ পল্টুর সাথে দেখা হয়ে গেছে,আর তারপর থেকে মেজাজটা বিগড়ে আছে সৌমিলির। পল্টুকে সে বারবার পইপই করে বলে দিয়েছিল যে,সে যেন বেশ কিছুদিন আর এই শহরে না থাকে। পর্যাপ্ত টাকাও দিয়ে দিয়েছিল সৌমিলি। তাহলে ও এখানে কেন? বাইরে গিয়েছিল,কিন্তু ফিরে এসেছে? এত তাড়াতাড়ি? সৌমিলি কি একটা ফোন করবে পল্টুকে? না না,তাতে একটা রেকর্ড থেকে যাবে। সৌমিলি খুব অস্থির হয়ে আছে। ভিড়ের মধ্যে দূর থেকে দেখেছে পল্টুকে,ডেকে কথা বলার সুযোগ পায়নি। সেই ঝড় বৃষ্টির রাত্রে মণীশের হাঁটুর ওপর যে আঘাত এসে পড়েছিল,সেটা প্রাকৃতিক কারণে নয়,দৈবের বশেও নয়। আঘাত করেছিল অন্য কেউ,কোনও মানুষ। হ্যাঁ,এমন কাজ মানুষ ছাড়া আর কে’ই বা করতে পারে। পল্টু কাজটা ঠিকঠাক করেছে ঠিকই, কিন্তু কথা রাখেনি সে। তার তো কথা ছিল বেশ কিছুদিন গা ঢাকা দেবার। তাহলে সে এখানে কেন? ছেলেটা সৌমিলিকে ফাঁসিয়ে দেবে না তো? কিন্তু টাকা তো ওকে যথাষ্ট দিয়েছে সৌমিলি। হয়তো ওর আরো টাকার দরকার,হয়তো সে ব্ল্যাকমেইল করতে চায় সৌমিলিকে। সৌমিলির চোয়াল শক্ত হয়ে উঠলো,হাত দুটো মুঠো করে সে চেয়ে রইলো দর্পণে নিজের প্রতিবিম্বের দিকে। তবে কি এবার পল্টুকেও ... ? সৌমিলি জানতো,একটা বেকার আর পঙ্গু ছেলের সাথে কখনোই বিয়ে দেবেন না মনিকর্ণিকা’র বাবা-মা। তখন মণীশের ত্রাতা হয়ে হাজির হবে সে নিজে। একদিকে মণিকর্ণিকার এতকালের প্রেমিককে ছিনিয়ে নেওয়া যাবে তার কাছ থেকে,অহংকারের থোতা মুখ ভোঁতা হয়ে যাবে ওর,অন্য দিকে উদার মনের মেয়ে হিসেবে সুনাম রটবে সৌমিলির। হিসেবটা বেশ ভালো করেই কষে নিয়েছে সৌমিলি। কিন্তু একটা বেকার আর পঙ্গু ছেলেকে বিয়ে করে কি লাভ হলো তার? এর কোন উত্তর নেই সৌমিলি’র কাছে। উত্তরের দরকারও নেই তার। সে যা চায়,সেটা তার চাই,ব্যাস। এর বেশি সে আর কিছু ভাবে না। হ্যাঁ,সে দখল করেছে মণীশের অধিকার — দখল। সে জয়ী,এমনটাই মনে করে সৌমিলি। এপর্যন্ত যতগুলো ইতিহাস সে পড়েছে,দেখেছে - সেখানে লেখা আছে শুধু দখলের কাহিনী। জমি-বাসস্থান-খাদ্য-নারী-ক্ষমতা,শুধু দখল আর দখল। যে যত মানুষকে হত্যা করেছে,সে তত বড় বীর! মানুষের সভ্যতার ইতিহাস একটা হরর মুভির চেয়ে কম ভয়ংকর তো নয়। রক্তের কাদা না মাড়িয়ে সিংহাসনে পৌঁছন যায় না,মনে করে সৌমিলি। তবে তার বেলায় দোষ হবে কেন? আয়নায় নিজের দিকে তৃপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সে। চেয়ে চেয়ে দেখে নিজেকে,আর অবাক হয়ে ভাবে, সত্যিই সে এতটা ভয়ংকর! নিজের কাঙ্খিত জিনিসটি পাবার জন্য সে এতদূর যেতে পারে? সৌমিলি তাহলে সব পারে,স-অ-ব? খুনীদেরও কি এইরকম আত্মতৃপ্তি থাকে? নাকি কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয় তারা? সৌমিলি জানে না। ওদিকে সেই ফুলশয্যার রাতেই মণীশও পেয়ে গিয়েছিল তার আগামী কন্টকিত জীবনের পূর্বাভাস। টের পেয়েছিল যে,তার পঙ্গুত্ব শুধু দুই পায়েই আবদ্ধ নেই,হয়তো স্নায়বিক কারণেই সেটা আরো ওপরে উঠে অবশ করে দিয়েছে তার পুরুষত্বকেও। সৌমিলি মণীশের দখল নিতে চেয়েছিল, নিয়েওছে। কিন্তু প্রাণবন্ত নয়, অনেকটা জড় বস্তু হিসেবেই।   সমাপ্ত
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register