Sun 26 October 2025
Cluster Coding Blog

কবিতায় স্বর্ণযুগে বোধিসত্ত্ব (গুচ্ছ কবিতা)

maro news
কবিতায় স্বর্ণযুগে বোধিসত্ত্ব (গুচ্ছ কবিতা)

ওকে বেঁধে রেখো, সেধে রেখো.....

ভালোবাসার গায়ে শুধুই রেখে যাও এক চিলতে মোনালিসা হাসি। বর্ষাকে বুকে নিয়ে যেভাবে তুমি শ্রাবণের আলপনা এঁকে যাও তার পুরোটাই মেঘবতী মায়া। আমার প্রতিটি সকাল কুমারী হয়ে ওঠে তোমার ওই ছুঁই ছুঁই মনটাকে ছুঁয়ে। জানি আকাশের কোনো বাঁধন নেই , তবু চুপিচুপি তাকে বুকের কাছে বেঁধে রাখতে ভীষণ ইচ্ছে হয়। যদি একবার আগন্তুকের স্পর্শ অন্তরে নিয়ে কচিপাতা রং এ তোমার চিলেকোঠার ফুলদানি সাজাই, তবে কখনো বলো না এ শুধু ক্ষনিকের রামধনু। বেনারসী মনটাই তিলোত্তমার গোপন সরণি... ওকে বেঁধে রেখো, সেধে রেখো, রেখো জামদানি করে।  

এ এক অন্য অবগাহন

প্রতিবার তোমাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার আগে যেভাবে আমার বুকে সিঁদুরের চন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠো তাতে আমিও জল হতে বাধ্য হ‌ই। সমুদ্র বিভক্ত হয় না জানি , তবু কোথাও যেন বিষাদের সানাই শূণ্যতার অক্ষরে অক্ষরে সহস্র তোমার ছবি আঁকে। গোলাপ ছোঁয়ার আগে উষ্ণতাটুকু সারা বুকে জড়িয়ে নিই বলেই হয়তো কাঁটার আঘাতটাও ভীষণ ভীষণ কাব্যিক হয়ে যায়। কবি হতে চাই নি গো আমি, শুধু চেয়েছিলাম আলো, হাওয়া আর তোমার কনকাঞ্জলি পরশটুকু নিয়ে অমরাবতীর উঠোনে একটা নিটোল গৃহহীন গৃহস্থ আলপনা এঁকে দিতে। নিঃসঙ্কোচে তোমাকে ছুঁয়ে নিলে রজনীগন্ধার সুগন্ধি বাঁকে বাঁকে গহীনের আবহসংগীত শোনা যায়। ভালোবাসা তো নিছকই কোনো শব্দ নয়, অনির্বাণ অবগাহনের পরিভাষাও হতে পারে।

শর্তহীন বসন্ত

আদিগন্ত বরাবর পথ খোলা , প্রান্তর‌ও বানভাসি বসন্ত। এমন হরিদ্রাবেলার গা ছুঁয়ে ফাগুনের চৌকাঠ ভরে মেঘের আলপনা এঁকে দিলাম। মিঠে চাঁদ যতটা নিকটবর্তী হয় , বুকের গভীরে নীলপাহাড়ি ঝর্ণা ততটাই খরস্রোতা হয়ে ওঠে। সময় কখনও নিজের হয় না জানি , শুধু সময়ের কাছে নিজেকে সঁপে দেওয়া যায়। প্রান্তিক সমর্পণের প্রাচীরে প্রাচীরে বোধের ভাস্কর্য সুবর্ণের আকাশগঙ্গায় মিশে গেলে প্রবেশ-প্রস্থান এক‌ই পথের পায়চারি। যাপন সস্নেহ হলে ফেরাটাও কিশলয় প্রচ্ছদে নিবন্ধিত থাকে। কবেকার পাকদন্ডী বেয়ে বেয়ে নির্ভেজাল ওমের কাছাকাছি যখন এসে গেছি , সীমানা তখন শর্তহীন বসন্ত।

রাঙামাটি পথিকের বৈধ বালিয়াড়ি

বসন্তভেজা প্রাচীন ছায়াপথের মেঠো গন্ধ বুকে নিয়ে চলছি শ্রীনিধির খোঁজে। গতকাল আর আজকের মধ্যে সুগন্ধি একটা ফারাক থাকলেও রমণীয় সিঁথির মায়া যেন সকল দূরত্বকে বিকেলের শ্রাবন্তী মাঠ করে তুলেছে। কোনো বাঁধনকেই তো আর ছেড়ে যাওয়া যায় না , বাঁধন‌ মানেই অমৃতাক্ষর। পলাতক হ‌ওয়ার কোনো পথ খোলা নেই, সেই আদিকালেই আমার চতুর্দশী ললাটের সজল ওষ্ঠের রাজতিলক এঁকে দিয়েছ। রারবার হোঁচট খেয়ে খেয়েই তোমার অনামী বৃত্তের কাছাকাছি এসে নিজের মধ্যে শ্যামলী নদীটাকে খুঁজে পাই। তুমি তিলোত্তমা বলেই তিলে তিলে আমার সিন্ধু হয়ে ওঠা‌। প্রতি মুহূর্তকে নিঃশব্দ আলিঙ্গনে আচ্ছন্ন করে যে ঝড়টা তোমাকে উপহার দিই, তার জোরেই তো বেঁধে রাখি। এছাড়া সবিশেষ তেমন কোনো ছাড়পত্র তো আমার কাছে নেই, যা দিয়ে টুকরো টুকরো করে তোমাকে আঁকড়ে রাখব। জানি কোনো সম্পর্কই অবৈধ হয় না , শুধু বিচারকের চোখেই প্রলেপ থাকে। যে পথেই হাঁটি সে পথ‌ই নগ্ন হয় , কিন্তু ভগ্ন করি না। সকল পথকেই সদর বুকে জড়িয়ে বৈধ বালিয়াড়ি করে তোলাতেই রাঙামাটি পথিকের উপর্যুপরি জয়। নিভৃতে তোমার সকালবেলার প্রতিটি অগোছালো চুলের অলকানন্দা ছুঁয়ে আমি বটবৃক্ষের মতোই জয়ী হয়ে গেছি।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register