Sun 26 October 2025
Cluster Coding Blog

গল্পেরা জোনাকি তে রূপক সান্যাল

maro news
গল্পেরা জোনাকি তে রূপক সান্যাল

মরেও শান্তি নেই !

  ১৮০০ শতকের শুরুর দিকে, নেপোলিয়নের মিশর বিজয় ইওরোপীয়দের জন্য মিশরের দরজা খুলে দেয়। আর মিশরের মৃত মানুষের সমাধি অর্থাত্‍ মমি, মিশরের নামের সাথেই জড়িয়ে আছে, সে কথা সকলেরই জানা। কিন্তু সেই সময় থেকে শুরু করে সমগ্র ভিক্টোরিয়ান যুগ ধরেই এই মমি ইওরোপীয় অভিজাতদের কাছ থেকে তার প্রাপ্য সম্মান বা গুরুত্ব পায়নি। জানা যায় যে, বৈধ-‘অবৈধ’ উপায়ে সংগৃহীত মমিগুলি সেসময় মিশরের রাস্তায় ফেরি করে বিক্রি করা হতো। নিচের ছবিতে এমনই এক বিক্রেতাকে দেখা যাচ্ছে।   সেই যুগের ইওরোপীয় অভিজাতরা প্রায়শই মমির আবরণ উন্মোচন’কে উপলক্ষ করে পার্টির আয়োজন করতেন। অনুমান করা যায় যে, হাসি হুল্লোর করতালি আর পানাহার সহযোগে কাপড় ইত্যাদি দিয়ে মোড়ানো শুকিয়ে আসা মৃতদেহগুলো একটু একটু করে অনাবৃত করা হতো। এছাড়াও প্রাচীন মিশরীয়দের সংরক্ষিত মৃতদেহগুলোকে অন্যান্য বিভিন্ন কাজেও ব্যবহার করা হতো। যেমন এগুলোকে গুঁড়ো করে মণ্ড বানিয়ে ঔষধি হিসাবে ব্যবহার করা হত, জ্বালানী হিসেবেও ব্যবহার করা হতো। এইসময় বিভিন্ন কাজে মমির ব্যবহার এতটাই জনপ্রিয় ছিল যে, চাহিদা মেটাতে নকল বাণিজ্যকেও তা প্ররোচিত করেছিল। রাস্তায় পড়ে থাকা মৃত ভিখারীদের শরীরের মাংস মণ্ড বানিয়েও মমির টুকরো বলে চালানো হতো।   শিল্প বিপ্লবের অগ্রগতির সাথে সাথে এই মমিগুলোকে আরও বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা শুরু হয়েছিল। বিপুল সংখ্যক মানুষ এবং অন্য প্রাণীর মমি সার হিসাবে ব্যবহারের জন্য ব্রিটেন এবং জার্মানিতে পাঠানো হতো। বেশ কিছু মমি এবং তার বিভিন্ন উপাদান পরবর্তীতে কাগজ তৈরির শিল্পে ব্যবহারের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা হয়েছিল। মার্ক টোয়েন’এর লেখা থেকে জানা যায় যে, স্টিম ইঞ্জিনের জ্বালানী হিসাবেও একসময় মমিকে ব্যবহার করা হতো।   image.png (সময়টা ১৮৬৫, মিশরের রাস্তায় এক ব্যক্তি মমি বিক্রি করছেন।)       ঊনবিংশ শতাব্দীর অগ্রগতির সাথে সাথে মমিগুলি প্রদর্শনের আয়োজন শুরু হয়। সেসময় অনেক মমি ধনী ইওরোপীয় এবং আমেরিকানরা তাদের মিশর পর্যটনের স্মৃতিচিহ্ন হিসাবে কিনেছিলেন। যারা একটি সম্পূর্ণ মমি কিনতে পারেননি, তারা মমির বিচ্ছিন্ন অংশ, যেমন মাথা, হাত বা পা কালোবাজার থেকে সংগ্রহ করেছিলেন।   প্রাচীন মিশরীয়রা মৃতদেহকে যে সম্মান দিতেন, তাদের সংরক্ষণ করার জন্য যতটা যত্ন নিয়েছিলেন, তার কানাকড়ি মূল্যও পরবর্তী কালের মানুষরা দিতে পেরেছিলেন কি? বিশেষতঃ, ইংল্যান্ড এবং ইওরোপের অন্যান্য দেশের প্রতিনিধিরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাণিজ্যের নামে যা যা করেছিল, তা কি যথেচ্ছাচার নয়? মৃত মানুষদের দেহগুলো নিয়েও ব্যবসা? মানুষের জীবিনের প্রতিটি ক্ষেত্রকে, তার শিল্প সংস্কৃতি ঐতিহ্য প্রথা আচার, প্রতিটি ক্ষেত্রকেই দাঁড়িপাল্লায় তোলার প্রবণতা আমরা যুগ যুগ থেকেই দেখে এসেছি। এ’ও তো একপ্রকার লুণ্ঠন।     (প্রাচীন মিশর বিষয়ক একটি ওয়েবসাইট থেকে ছবি ও মূল তথ্য সংগৃহীত)
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register