Sun 26 October 2025
Cluster Coding Blog

গল্পেরা জোনাকি তে রীতা পাল (ছোট গল্প সিরিজ)

maro news
গল্পেরা জোনাকি তে রীতা পাল (ছোট গল্প সিরিজ)

কালবৈশাখী

  শহরের কোলাহল কোনদিন আমার ভালো লাগে না। কেন জানি না? গ্রামের নির্জনতা আমাকে ভীষণ টানে। তাই ছোট থেকে মামা বাড়ি যাবার তাগিদটা আমার খুব বেশি। ছুটি পেলেই হল,গন্তব্য সবুজে ঘেরা ছোট্ট একটা গ্রাম। মামা বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে গেছিল দামোদরের একটা শাখা নদী। নদীর এপাড়টায় যেমন জনবসতি ছিল ওপাড়টায় তেমন বসতি ছিল না। হাতেগোনা কয়েকঘর। তারপরেই দিগন্ত জোড়া চাষের জমি। পাড় জুড়ে তাল,নারকেল আর আম বাগান। আমবাগান পেরোলেই শ্মশান। এই গ্রামের মানুষদের এখানেই দাহ করা হতো। একটা চাতাল মত করা ছিল। চৈত্র মাসে অমাবস্যার রাতে ওখানে শ্মশান কালী পুজো হতো। ঘাটের কাছে একটা বিশাল বট গাছ ছিল। তার শিকড়গুলোর বেশিরভাগটাই জলে। অপর পাড়েই ছিল গ্রামের বসতি। ছোট ছোট সব মাটির একতলা-দোতলা বাড়ি। বিশাল বিশাল উঠোন,ধানের গোলা। আমড়া,তেঁতুল, নোনা,আতা,সজনে,মাধবীলতা,নয়ন তারা কত ফুলের গাছ। গরু-বাছুর ভরা সংসার। এপাড়ে আর একটা লক্ষ্য করার মত বিষয় হল,খানিকটা দূরে দূরেই নদীর ঘাট করা থাকতো আর প্রত্যেকটা ঘাটেই একটা দুটো করে পানসি বাঁধা থাকতো। এপাড় থেকে ওপাড়ে যাবার জন্য আমাদের ঘাটটার সামনেও একটা নৌকো আর একটা ডোঙা বাঁধা থাকতো। এই ডোঙাটা নদীতে হেলে যাওয়া একটা খেজুর গাছের সঙ্গে বাঁধা থাকতো। জোয়ার আসলে খেজুর গাছটার শুধু মাথাটা দেখা যেত। আর অন্য সময়, আমার মামাতো-মাসতোতো ভাই-বোনেরা ওর ওপর বসে বসে জলে পা ডোবাতাম। কি ভালো যে লাগতো! সেবার গরমের ছুটিতে মামার বাড়িতে গিয়েছিলাম।সেদিন নদীর ধারে অনেকে ছিপ ফেলে মাছ ধরছিল। দুপুর বেলা, মাসির মেয়ে লঙ্কা দিয়ে তেঁতুল মেখে আনলো। নৌকায় বসে বসে দুজনে খাচ্ছি আর জলে পা দোলাচ্ছি। আকাশের দিকে তাকাতেই পাখিগুলো কেমন এলোমেলো ভাবে উড়তে দেখলাম। আর আকাশটাও কালো করে আসছে। এমন সময় মামির চিৎকার,“শেফালী তাড়াতাড়ি আয় উঠোনে ধান মেলা আছে। ঝড় উঠবে। শিগগিরি আয় দেখি।” “যাই মা”, বলেই শেফালী উঠে পড়ল। যাবার সময় বলে গেল,“তুই থাক আমি আসছি। ওপাড়ে আম কুড়াতে যাব।” ও ঘাট থেকে উঠে যেতে না যেতেই নৌকো দুলতে আরম্ভ করলো। চরাচর অন্ধকার করে ঝড় উঠলো। আমি আর দেরি না করে নোঙরটা তুলে নিলাম নৌকাতে। কোন রকমে লগিটা বেয়ে ওপাড়ে গেলাম। আম বাগানে যেতেই দেখি,বামন পাড়ার খুরি টপ্ টপ্ করে আম কুড়াচ্ছে। বললাম,“ও খুড়ি,তুমি কখন এলে? আমরা তো ঘাটেই বসেছিলাম। দেখলুম না তো এপাড়ে আসতে!” খুড়ি কোন কথা না বলেই টপ্ টপ্ করে আম কুড়াতে লাগল। আমি আর দেরি না করে টপ্ টপ্ করে ক’টা আম কোঁচড়ে ভরে নিলাম। জোরে বৃষ্টি এলো। খুব মজা লাগছিল ভিজতে। ভিজতে ভিজতে বট গাছটার কাছে চলে এলাম। কোঁচড় ভর্তি কাঁচা আম। এসে দেখি ঘাটে নৌকাটা নেই। চতুর্দিক অন্ধকার,বৃষ্টি পড়ছে। ভাবলাম খুড়িকে ডাকি।খানিক দুরেই একটা সাঁকো আছে। দুজনে মিলে ওপাড়ে চলে যাব। আবার আম বাগানে গেলাম। খুড়িকে আর দেখতে পেলাম না! আম বাগান থেকে বেরোতেই একটা হৈচৈ এর আওয়াজ পেলাম। নৌকো নিয়ে ছোট মামা, মামি,শেফালি সবাই এসে গেছে। সন্ধ্যেবেলা গোলার ধারে সবাই মিলে বসে চা খাচ্ছি। ছোটমামা বলল,“তুই একা একা অন্ধকারের মধ্যে আম কুড়াতে চলে গেছিস?” বললাম,“আমি একা কোথায়! বামন পাড়ার ওই খুড়িও তো ছিল।” শেফালী বলল,“কোন খুড়ি?” “ কেন? জগাদার মা,আবার কে!”আমি বললাম । খানিকক্ষণ সবাই চুপ করে গেল। তারপর শেফালী বলল,“দু’দিন আগেই জগাদার মা মারা গেছে। ওই শ্মশানে, শেষ ওকেই পোড়ানো হয়েছে।”
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register