Sun 26 October 2025
Cluster Coding Blog

গদ্যের পোডিয়ামে রূপক সান্যাল

maro news
গদ্যের পোডিয়ামে রূপক সান্যাল

সিনেমার গল্প অথবা গল্পের সিনেমা

  সেলিনা কার্প বিনিয়াজ জন্মেছিলেন ১৯৩১-এ, পোল্যাণ্ডের ক্রাকাও শহরে । তাঁকে আজ পৃথিবীর অনেকেই চেনেন। সময়টা ১৯৪৪ এর অক্টোবরের মাঝামাঝি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ প্রায় শেষের দিকে। ইওরোপের বিভিন্ন দেশ জার্মান বাহিনীর দখল করা তাদের দেশের বিভিন্ন অংশ পুনোরুদ্ধার করতে শুরু করেছে। যুদ্ধের অভিমুখ ঘুরতে শুরু করেছে ক্রমশ। এমনই একটি দিনে প্লাসজো কনসেনট্রেশন ক্যাম্প থেকে নাৎসি বাহিনীর লোকেরা প্রায় তিনশ’ জন মহিলাকে নিয়ে এসেছিল আউশভিৎস ক্যাম্পে। মহিলাদের সেই দলে তের বছর বয়সের একটি বালিকাও ছিল— বাবা ইগনাক এবং মা ফেলিসিয়া’র একমাত্র সন্তান সেলিনা কার্প। বাবা-মায়ের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে আউশভিৎস ক্যাম্পে তাকে আলুর খোসা ছাড়ানোর কাজে লাগানো হয়েছিল। এরপর ঘটনাচক্রে সেখানে আবির্ভাব ঘটে এক জার্মান ব্যবসায়ী অস্কার শিণ্ডলার-এর। তিনি নিজেও নাৎসি দলের সদস্য ছিলেন। তিনি পোল্যাণ্ডে এসেছেন যুদ্ধের ঘোলাজলে কিছু বাড়তি মুনাফা করতে, এখান থেকে যদি কিছু ইহুদী বন্দীকে নিয়ে যাওয়া যায় তাহলে কম পারিশ্রমিকের বিনিময়ে তার কারখানার কাজে তাদের লাগানো যেতে পারে, এই উদ্দেশ্যে। প্রথমে শুধুমাত্র ব্যবসার স্বার্থের কথা মাথায় থাকলেও বন্দী ইহুদীদের দুর্দশা আর অসহায়ত্ব শিণ্ডলার-এর মনে ক্রমে করুণার জন্ম দেয়। ইহুদীদের ওপর জার্মান বাহিনীর অত্যাচার দেখে শিণ্ডলার অত্যন্ত মর্মাহত হন। তিনি মনে মনে সংকল্প করেন যে, এদের রক্ষা করতে হবে। তিনি প্রায় এগারশ’ জনের একটি তালিকা প্রস্তুত করেন এবং তারপর তাঁর সঞ্চিত পুঁজি প্রায় নিঃশেষ করে, ঘুষ দিয়ে, নানা রকম কৌশল করে সেই এগারশ’ নারী-পুরুষদের কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের অবধারিত মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনেন। এই এগারশ’ জনের মধ্যে যে ছিল সর্বকনিষ্ঠ, তারই নাম সেলিনা কার্প, বয়স তের বছর। এরপর বিভিন্ন বিচিত্র খাতে সেলিনার জীবন বইতে শুরু করে। ১৯৪৫-এ যুদ্ধ শেষ হয়, ১৯৪৭-এ সেলিনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। সেখানে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন এবং পরবর্তীতে তাঁর সহকর্মী আমির বিনিয়াজকে বিয়ে করেন। তবে শিণ্ডলারকে তিনি তাঁর রক্ষাকর্তা হিসেবে মেনেছেন সারা জীবন। ওপরে বর্ণিত ঘটনার ওপর থমাস কিনিয়ালি নামে একজন অস্ট্রেলীয় ঔপন্যাসিক ‘শিণ্ডলার’স আর্ক’ নামে একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেন ১৯৮২ সনে, যেই বইটি বুকার পুরস্কার পেয়েছিল। কিনিয়ালির সাথে পরিচয় হয়েছিল সেলিনার। তিনি জানিয়েছেন যে, এই উপন্যাস লেখার জন্য অনেক তথ্য আর অনুপ্রেরণা তিনিই লেখককে জুগিয়েছিলেন। এরপর ১৯৯৩ সনে বিখ্যাত চিত্রপরিচালক স্টিফেন স্পিলবার্গ ‘শিণ্ডলার’স লিস্ট’ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন এই উপন্যাসের ওপর ভিত্তি করে। সেলিনা বলেছেন যে, শিণ্ডলার যেমন তাঁকে জীবন দিয়েছেন, তেমনি স্পিলবার্গ তাঁর জীবনকে দিয়েছেন ভাষা। স্পিলবার্গকে তিনি তাঁর জীবনের দ্বিতীয় শিন্ডলার বলে মনে করেন। বিভিন্ন সাক্ষাত্‍কারে, লেখায়, বক্তৃতায় তিনি তাঁর জীবন আর অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়েছেন, মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছেন, ভালোবাসার কথা বলেছেন। আজকের এই যুদ্ধোন্মত্ত পৃথিবীতে যুদ্ধ সম্পর্কে তাঁর বক্তব্যগুলো আরও একবার মন দিয়ে শোনা জরুরী বলে মনে হয়। [তথ্যসুত্রঃ আলেকজান্দার গোরেলভ, মস্কো / সেলিনা বিনিয়াজ-এর সাক্ষাৎকার এবং কিছু বক্তৃতা ইত্যাদি]
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register