Sun 26 October 2025
Cluster Coding Blog

অণুগল্পে তুলসী কর্মকার

maro news
অণুগল্পে তুলসী কর্মকার

রূপকথা

ক্যানভাস বিবাহ পিকনিক। আজ আমি কত সুন্দর। হাতে রং চোখে স্বপ্ন। মিষ্টি মাছ দই কত শত আয়োজন। কলরব। সর্বমঙ্গল্য মঙ্গলেসু। আতপচাল পানপাতা সুপরি আঁঠুনি ভাড় তিল জব আমশাখা ইত্যাদি। ভিড় ঠেলে আমার দর্শন। শঙ্খধ্বনি উলু উলু হলুদ মাখা বিকেল স্নান। শাঁখা পোলা নোয়া সব দেখছি। লাবণ্যদি এলো। আমাকে নিয়ে আজ অনুষ্ঠান। পিঁড়ির উপর বসে হাতে হাত গামছা ঢাকা শুভদৃষ্টি খইচড়া কেমন সব লাগবে। ভাবছি এরপর কি হবে। মামা বলতে গেল উঠানের লাইটটা জ্বলছে না। পিসিমণির শাড়িটি খুব সুন্দর। বাপিকে কেমন খেপা খেপা লাগছে। মা আনমনে। দিদি কেন চিৎকার করছে। মাসিমণি ভাড়ার ঘরে। মেজপিসিকে মিস করছি। ছোটকাকু জানিয়ে গেল বুলদা এসেছে। কাকিমা বুনিকে নিয়ে ব্যস্ত। খিদে পাচ্ছে ঘুম পাচ্ছে সবাই এমন করে দেখছে বাথরুম যেতে লজ্জা পাচ্ছি। ছোটকাকুর মেয়ে অনন্যা নিতকনে। আমার সাথী। মাঝে মাঝে মামাবাড়ি গেলে একা হয়ে যেতাম। আজ কপালে চন্দনের টিপ ঠাণ্ডা নরম ভালো লাগছে। তুহিনার খুব শখ ছিল আমাকে নিজে হাতে সাজাবে। সে আসতে পারেনি। হঠাৎ মন কেমন করে। সন্ধ্যে হয়। বাবাকে বলল দাদা সব রেডি বর কখন আসবে?
সঞ্জয় আসবে। দেখব আজ বর সাজে কেমন লাগে। ফোন ধরতে ইচ্ছে করছে না। কখন ১০ টা মিস্ট কল হল বুঝতে পারিনি। কাজ ছাড়াই ব্যস্ততা অনুভব হচ্ছে। হই হই শুরু হ্যাঁ বর এসছে। আমার সঞ্জয় সাময়িক ভিড় ঘিরে ধরছে। কেউ ঠকাতে কেউ মিষ্টি খাওয়াতে কেউ জামাই দেখতে ছুটল। আমায় কে একজন এসে বলে গেল তোর সাথে ভালোই মানাবে। একটু স্বস্তির নিশ্বাস পড়ল। ততক্ষণে কত বরযাত্রী আমাকে দেখতে আসে। চেনাদের মধ্যে সঞ্জয়বোন আর ভগ্নিপতি। পাশে বসল। সিঁতিটা সোজা করে দিল। শাড়িটা বাগিয়ে ধরতে বলল। একটু মড়লি করে বুঝিয়ে দিল ওদের পজিশন। ক্ষণিকপর বিয়ে শুরু। দূর্বা তুলসী ধূপ ফুল ঘি ধান আতপচাল কলাপাতা প্রদীপ  শালকাঠ বালি গঙ্গামাটি কশা কুশি আরো কত সব ছিল মনে নেই। বাবা বরণ করল। আলপনা দেওয়া ছামলাতলা। অনেক মন্ত্র সহযোগে সিঁদুর দান খইচড়া শেষ হল। একটু স্বস্তি। খাবার পালা পড়ল। খেতে ইচ্ছে করছে না। অথচ কত বড় মাছের মুড়ো আগে পেলে পেট পুরে খেতাম। এখন নিজেকে অল্প আলাদা লাগছে। অনেকজন মিলে আসর  চলল…
ধীরে ধীরে আলো ফুটল। পাখি ডাকল। ভোরবেলা। একের পর এক ছেড়ে যাবার পালা। সবার মন খারাপ। বাবার করুণ মুখ মায়ের চোখে জল। দিদি গলা জড়িয়ে কাঁদে। বুক ধক করে উঠে। অথচ মা এইভাবে একদিন এসেছিল।  কনকাঞ্জলি দিল মা। বিদায় বেলা। কেমন লাগছে খুব কান্না পাচ্ছে আর বলতে পারব না।
গাড়ি চলতে শুরু করল। বটগাছ গোয়ালঘর ফুটবল মাঠ কুবাই নদী শাল জঙ্গল চোখের নিমেষে সরে গেল। এক মঞ্চ ছেড়ে আর এক মঞ্চে। ক্রমশ …
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register